সরস্বতী পুজোয় অনেকেই বাড়িতেই জোড়া ইলিশ খাওয়ার চল রয়েছে। কিন্তু সরস্বতী পুজোয় ইলিশ খাওয়ার রেওয়াজ কেন রয়েছে জানেন? অনেকে ওই দিন জোড়া ইলিশের বিয়েও দেন। সেটির কারণই বা কী?
এটি মূলত পূর্ববঙ্গের বাঙালিদের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির সঙ্গে সরাসরি সরস্বতী পুজোর কোনও সম্পর্ক নেই। এই পদটি মূলত শ্রীপঞ্চমীর দিনে খাওয়ার রেওয়াজ। ওই একই দিনে সরস্বতী পুজো হয় বলে একই দিনে দু’টি পালিত হয়।
কী কী হওয়ার রেওয়াজ ছিল এদিন?
এ দিন সকালে কাঁচা হলুদ মেখে স্নান করে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা ইলিশ কিনতে যেতেন। গৃহকর্ত্রীরা রেকাবিতে ধান, দুব্বো, তেল, সিঁদুর ও কাঁচা হলুদ সাজিয়ে রাখতেন। অনেকে একটি রুপোর টাকাও রাখতেন তার মধ্যে। এর পরে গৃহকর্তা জোড়া ইলিশ নিয়ে বাড়ি ঢোকার সময় উলুধ্বনি ) দেওয়া হত। একটি কুলোয় ইলিশ দুটো রাখা হত এর পরে।
জোড়া ইলিশ বরণ লোকাচারের ক্ষেত্রে কোনও কোনও পরিবারে আস্ত বেগুনও রাখা হত। অনেক পরিবারে অবশ্য একটি ইলিশ মাছ রান্নার রেওয়াজও ছিল। সেক্ষেত্রে ইলিশের সঙ্গে শিলনোড়া রাখা হত। একে ‘নোড়া দিয়ে জোড়া ইলিশ’ ও বলা হত। এক্ষেত্রে দু’টি ইলিশের বিয়ের বদলে একটি ইলিশের সঙ্গে নোড়ার বিয়ে হত। নোড়াটি পুরুষ ও ইলিশ মাছকে নারীর প্রতীক ধরা হত।
এই ইলিশ রান্নার বিশেষ পদ্ধতিও আছে।
কীভাবে রান্না হয় সরস্বতী পুজোর ইলিশ? জেনে নিন রেসিপি।
- প্রথমে জোড়া ইলিশ বরণ করার পর রান্না করতে হয়।
- এক ফোড়ন দিয়ে এই রান্না হয়। অর্থাত্ ফোড়ন দিয়ে আনাজগুলি এক বারে দিয়ে দিতে হবে। তার পরে জল দিতে হয়।
- হলুদ বাটার ঝোল ফুটে উঠলে মাছগুলি কাঁচা অবস্থায়ই ঝোলে দিতে হয়।
- রান্নায় গুঁড়ো হলুদ, লঙ্কা গুঁড়ো, ইত্যাদি দেওয়া বারণ। তবে কাঁচা লঙ্কার ঝাল খুশি মতো দেওয়া যায়।
বাংলাদেশের বিক্রমপুরেই এই প্রথার প্রচলন বলে অনেকে মনে করেন। তার পরে সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে গোটা বাংলায়।