ভারতের নানা রাজ্যে ছড়িয়ে আছে প্রায় ২৫০০-এরও বেশি উপজাতি ও আঞ্চলিক গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীগুলোর দীর্ঘকালের প্রাচীন সংস্কৃতি ভারতের প্রাণ। সারা ভারত জুড়ে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য গড়ে তুলেছে এই জনজাতিগুলোই। প্রায় প্রতি রাজ্যেই রয়েছে এমন জনজাতি। তাদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব কিছু শিল্পের আঙ্গিক। এই আঙ্গিকের নিরিখেই শিল্পগুলি নজর কাড়ছে শিল্পপ্রেমীদের। দীর্ঘ চর্চার ফলে বেশকিছু শিল্প পৌঁছেছে খ্যাতির শিখরে। অনেক শিল্প পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের দরবারে। বিদেশের শিল্পপ্রেমীদের থেকে আদায় করে আনছে স্বীকৃতি। এই লেখায় থাকছে তেমনই ছ’টি বিখ্যাত শিল্পের হদিশ।
১. ওয়ার্লি ফোক পেন্টিং: মহারাষ্ট্রের প্রাচীন শিল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ওয়ার্লি পেন্টিং। দেয়ালের উপর গাঢ় লাল প্রেক্ষাপটে সাদা রঙ দিয়ে আঁকা হয় নানারকম সামাজিক চিত্র। আঁকার মধ্যে ব্য়বহার করা হয় বৃত্ত, বর্গক্ষেত্র ও ত্রিভুজের মতো বিভিন্ন জ্যামিতিক আকার। বাঁশের তুলি দিয়ে দৈনন্দিন কাহিনী ফুটিয়ে তোলার জন্যই এই শিল্প বিখ্যাত।
২. ভিল শিল্প: ভারতের রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট ও মহারাষ্ট্রে বসবাস ভিল জনজাতির। এটি ভারদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনজাতি। ভিলগোষ্ঠীর শিল্পীরা মূলত শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তোলে বাড়ির দেওয়ালে। মাটির দেওয়াল জুড়ে নানারকম চিত্রের সমাহারে গড়ে ওঠে ভিল শিল্পের প্রাণ। শিল্পের কাজে ব্যবহৃত হয় নিম ও অন্য়ান্য় গাছের ডাল। এছাড়া, রঙ হিসেবে প্রাকৃতিক রঙ ব্যবহার করে এই জনগোষ্ঠী।
৩. গন্ড: মধ্যভারতের গন্ড গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক কার্যকলাপই একযোগে গন্ডশিল্প হিসেবে পরিচিত। মূলত নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষা করতে নাচ, গান ও ছবি আঁকার মধ্যে দিয়ে গন্ডজাতি তাদের শিল্পকর্ম করে থাকে। কাগজ, কাপড়,ক্যানভাসে আঁকা গন্ড পেন্টিং কুড়ি বছর ধরে কোনওরকম ক্ষয় ছাড়াই টিকে থাকে।
৪. কাভাড়: ৫০০ বছর পুরোনো কাভাড় রাজস্থানের চিতোরগড়ের জঙ্গিদ ব্রাহ্মণদের মধ্যে প্রচলিত একটি শিল্পকর্ম। এই ফর্মে হালকা কাঠের তৈরি একটি ত্রিমাত্রিক বাক্সের বিভিন্ন তলের গায়ে নানারকম ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়। রামায়ণ, মহাভারত, বিভিন্ন পুরাণের নানা কাহিনী বিভিন্ন রঙের ছোঁয়ায় ফুটে ওঠে এই তলগুলির উপর।
৫. কলমকারি: হিন্দিতে কলমকারির অর্থ হল কলমের কাজ। সূক্ষ বাঁশের কলম আর ভেষজ রঙ এই শিল্পের মূল উপকরণ। গোলকুন্ডার সুলতানের আমলে এই শিল্প উৎকর্ষ লাভ করেছিল। এই শিল্পের আঙ্গিকের পার্সি প্রভাব লক্ষণীয়।
৬. ফাড়: রাজস্থানের এই শিল্পকর্ম একটি ১৫ থেকে ৩০ ফিট লম্বা কাপড়ের উপর হয়। আকার জন্য ব্যবহার করা হয় ভেষজ রঙ। মূলত আঞ্চলিক দেবতা পাবুজি বা দেবনারায়ণের নানা গল্প বলা হয় এই দীর্ঘ সিরিজ পেন্টিংয়ের মাধ্যমে।