সমাজের তথাকথিত মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন তাঁরা। আজও অনেকেই তাঁদের বাঁকা চোখে দেখেন। আড়ালে আবডালে তাঁদের নিয়ে মজা করা হয় হাজারো, চলে মুখ টিপে হাসাহাসি! কতই না নাম দেওয়া হয় তাঁদের, ছুঁড়ে দেওয়া হয় মন্তব্য। এ হেন রূপান্তরকামীদেরও সাধ হয় পুজোয় সামিল হয়, অংশ নিতে। তাই তাঁরাও এবার নিজেদের মতো করে আয়োজন করেছে দুর্গাপুজোর। তবে এটা প্রথমবার নয়, গত পাঁচ বছর ধরে এই পুজো করে আসছেন রূপান্তরকামীরা।
এই পুজোতে দেবী দুর্গা পূজিত হন না। বরং তাঁর বদলে পুজো হয় অর্ধনারীশ্বর! অর্থাৎ একদিকে পার্বতী, অন্যদিকে মহেশ্বর। ২০১৭ সালে প্রথমবারের জন্য কল্লোলিনী তিলোত্তমা এই পুজোর সাক্ষী থেকেছিল। পশ্চিমবঙ্গের রূপান্তরকামী সমিতি এই পুজোর উদ্যোগ নেয়। প্রথম তিন বছর এই পুজোটি গোখেল রোডে সমিতির কার্যালয়ের কাছে অনুষ্ঠিত হলেও শেষ দুই বছর মুকুন্দপুরের কেন্দ্রীয় সরকার যে শেল্টার তৈরি করে দিয়েছে তাঁদের জন্য সেখানে করা হচ্ছে এই পুজো।
তবে আচমকা এরম আলাদা করে পুজো কেন? এই পুজোর যাঁরা উদ্যোক্তা তাঁদের বক্তব্য হল যে কোনও উৎসব, অনুষ্ঠান থেকে তাঁরা আড়ালে থাকতেই ভালোবাসেন, যেহেতু অনেকেই তাঁদের নিয়ে মজা মশকরা করেন। সেই মানসিক যন্ত্রণা, কষ্টের হাত থেকে মুক্তি পেতেই তাঁরা নিজেদের লুকিয়ে রাখতেন। কিন্তু তারপর একত্রিত হয়ে নিজেদের পুজো আয়োজন করার ভাবনা আসে।
নবরাত্রিতে নয়দিন ধরেই এই পুজো করা হয় থাকে। কে পুজো করেন? রূপান্তরকামীদের মধ্যেই একজন এই পুজোতে পৌরহিত্য করে থাকেন। তবে যেমন তেমন ভাবে পুজো করেন না তিনি। পুজোর ১৫ দিন আগে থেকে তাঁকে ঠিক মতো শিক্ষা দেওয়া হয় পুজোর ব্যাপারে। এই সময়ে তাঁরা সকলে মিলে খুব আনন্দ করেন। একসঙ্গে রান্না করে খাওয়া থেকে শুরু করে সবটাই হয়ে থাকে।
তবে কি কেবল রূপান্তরকামী মানুষেরাই এই পুজোতে অংশ নেন? একদমই না। অ্যাসিড আক্রান্ত, পথশিশু, এইচআইভি রোগীরাও এই পুজোতে অংশ নেন। সরকারের তরফে ৬০ হাজার টাকা অনুদান পাওয়া গিয়েছে এই বছর, এছাড়া রূপান্তরকামীরা নিজেরা বাকি টাকা চাঁদা হিসেবে দেন। নিজেরাই নিজেদের পুজোর ফান্ডিং করে থাকেন। পুরনো প্রতিমা তো আছেই, এবার তার সঙ্গে তৈরি করা হচ্ছে নতুন প্রতিমা।