ক্রমশ তীব্র হচ্ছিল সমালোচনার মাত্রা। এই অবস্থায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে দাঁড়াল উত্তরপ্রদেশ। জানাল, 'আগেভাগে' অনুমতি ছাড়াই উত্তরপ্রদেশের শ্রমিকদের কাজে নিয়োগ করতে পারবে অন্য রাজ্যগুলি।
নাম গোপন রাখার শর্তে উত্তরপ্রদেশের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, 'নয়া পরিযায়ী শ্রমিক কমিশন গঠনের নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী (যোগী আদিত্যনাথ)। আমাদের লোকবলকে নিয়োগ করার জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকারের থেকে অন্য রাজ্যকে অনুমতি গ্রহণ করার কোনও নিয়ম নেই।' সেই বৈঠকে ১৫ দিনের মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের দক্ষতা নিরূপণের নির্দেশ দেন যোগী। ভিন রাজ্যে থাকা যে শ্রমিকরা উত্তরপ্রদেশে ফিরতে ইচ্ছুক, তাঁদের চিহ্নিত করার জন্য সব রাজ্যকে চিঠি পাঠানোর কথাও বলেন যোগী।
পাশাপাশি ওই কর্তা দাবি করেন, শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়ার জন্য কমিশন তৈরি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, 'বাড়ি এবং ঋণের ইত্যাদির জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের আমরা সরকারি প্রকল্পের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হবে।'
গত রবিবার একটি ভিডিয়ো কনফারেন্সে যোগী বলেছিলেন, 'যদি কোনও রাজ্য লোকবল চায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে কর্মী বা শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা ও বিমা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের অনুমতি ছাড়া ওরা (রাজ্যগুলি) আমাদের মানুষদের নিতে পারবে না। কারণ ওঁদের (শ্রমিকরা) সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যে খারাপ ব্যবহার করা হয়।' সেই ঘোষণার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন উঠেছিল, তেমনই পরিযায়ী শ্রমিকরা যোগীর ‘ব্যক্তিগত সম্পত্তি’ নয় বলে আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াচ্ছিলেন বিরোধীরা।
যদিও উত্তরপ্রদেশের ওই শীর্ষ কর্তা সাফাই গেয়ে বলেন, 'পরিযায়ী শ্রমিকদের অবস্থায় গভীরভাবে ব্যথিত মুখ্যমন্ত্রী। অন্য রাজ্যগুলি তাঁদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার করছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী যখন অন্য রাজ্যের অনুমতির কথা বলেছিলেন, তখন শ্রমিকদের অভিভাবক হিসেবে বলেছিলেন তিনি। এটা শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগ, যা রাজনৈতিক মন্তব্য হিসেবে এসেছে।'
তবে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য যে কমিশন গঠন করা হচ্ছে, তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। আইন বিশেষজ্ঞ সি বি পান্ডে বলেন, ‘কল্যাণমূলক সংস্থা হিসেবে পরিযায়ী কমিশন কাজ করতে পারে এবং কর্মীদের স্বার্থের দিকে নজর দিতে পারে। কিন্তু অধিকাংশ পরিযায়ী শ্রমিকই অসংগঠিত ক্ষেত্রে কর্মরত। রাজ্য সরকার শুধুমাত্র নিয়োগকারী সংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যদি কোনও (সংস্থা) থাকে তো। ৯৯ শতাংশের বেশি ক্ষেত্রে কোনও নিয়োগকারী সংস্থা থাকে না। অসংগঠিত ক্ষেত্রের অধিকাংশ শ্রমিক নিজেদের পরিচিত বা পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে কাজের খোঁজ করেন এবং তাঁদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর নাও হতে পারে।’