একের পর এক মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগ। চাপের মুখে অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার প্রয়োগ বন্ধ ডেনমার্কে। গত এক-দুই সপ্তাহে শুধু ডেনমার্ক নয়, আয়ারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ইস্টোনিয়া, লিথুয়ানিয়া, নরওয়ে, আইসল্যান্ড এমনকি থাইল্যান্ডও হেঁটেছে একই পথে। তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার অভিযোগে বন্ধ করা হয়েছে টিকাকরণ।
এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে নরওয়ের দিক থেকে। সেখানে তিনজন স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যাকসিন নেওয়ার পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে অভিযোগ। একাধিক সূত্রে দাবি, রক্ত জমাট বাঁধা, রক্তে প্লেটলেট-এর সংখ্যা কমে যাওয়ার মতো মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে তাঁদের শরীরে। ফলে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ডেভেলপ করা এই ভ্যাকসিনকে ভাল চোখে দেখছে না বহু দেশ।
একের পর এক গুরুতর অভিযোগের পরেও টিকাটির উপর থেকে ভরসা কমাতে নারাজ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) । উল্টে তাঁরা টিকার কার্যকরিতা এখনও বেশ আত্মবিশ্বাসী। একই সুর ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সির-ও।
গত সপ্তাহেই শুক্রবার হু-র মুখপাত্র মার্গারেট হ্যারিস এ বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, 'আমাদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ব্যবহার করা বন্ধ করার প্রয়োজন নেই।'
ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি গত বৃহস্পতিবার জানায়, ভ্যাকসিনটির উপকারিতা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তুলনায় ঢের বেশি। তাই এটির ব্যবহার জারি রাখার পক্ষেই সওয়াল করে তারা।
ইউরোপজুড়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ব্যবহার বন্ধ করছে একের পর এক দেশ। ভারতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে?
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা টিকার ভারতে নাম Covishield । উত্পাদন করছে সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া। অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে হাত মিলিয়ে প্রায় ১০০ কোটি ডোজ উত্পাদন করছে সিরাম ইনস্টিটিউট। কোভ্যাক্সিনের পাশাপাশি ভারতে চলছে কোভিশিল্ডেরও প্রয়োগ। শুধু ভারত নয়, কোভিশিল্ড অর্ডার করেছে একাধিক দেশ।
ইউরোপের পরিস্থিতির পরেই যদিও নড়েচড়ে বসেছে মোদী সরকার। টিকা গ্রহণের পরবর্তী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আরও গভীরভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার হবে। শনিবার এমনটাই জানিয়েছে সংবাদসংস্থা এএফপি।
ভারতের করোনা সংক্রান্ত ন্যাশানাল টাস্ক ফোর্স-এর সদস্য এন.কে আরোরা এ বিষয়ে বলেছেন, 'আমরা প্রতিটা কঠোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা খতিয়ে দেখছি। যদি কিছু চিন্তার বিষয় থাকে, অবশ্যই তা সবাইকে জানানো হবে।'
তবে, এখনই কী ভয় রয়েছে Covishield-কে ঘিরে?
আরোরা জানান, আপাতত ভয়ের কিছু মেলেনি। ভারতে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সংখ্যা ভীষণভাবে নগণ্য।
তবে, তা সত্ত্বেও বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে রক্ত জমাট বাঁধার যে অভিযোগ উঠছে ইউরোপে, তাই নিয়ে সতর্ক তাঁরা।
এখনও পর্যন্ত ভারতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর বিরূপ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ০.০২০% । হাসপাতালে ভর্তির হার ০.০০০২৫% । এখনও পর্যন্ত টিকা প্রয়োগের পর কোনও মৃত্যুর ঘটনা হয়নি।