মাদক বিরোধী অভিযানে নেমে পুলিশ ও মাদক পাচারকারীদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ধুন্ধুমার কাণ্ড বেধে গেল ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনেরিওতে। দু’পক্ষের গুলিবিনিময়ে এক পুলিশ আধিকারিক—সহ কমপক্ষে ২৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।এই বন্দুকযুদ্ধের সময় মেট্রো ট্রেনের দুই যাত্রীও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। তবে তারা বেঁচে আছেন। অভিযান থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০টি বন্দুক ও প্রচুর পরিমাণ মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।এদিকে বন্দুকযুদ্ধে নিজেদের এক আধিকারিকের মৃত্যুর বিষয়ও নিশ্চিত করেছে ব্রাজিলের পুলিশ। নিহত ওই পুলিশ আধিকারিকের নাম ইন্সপেক্টর আন্দ্রে লিওনার্দো দ্য মেল্লো ফ্রিয়াস।
বৃহস্পতিবার রিও-র জাকারেজিনহো বস্তিতে ওই অভিযান চালায় পুলিশ। অস্ত্রযুক্ত গাড়িতে করে সশস্ত্র পুলিশ সেখানে হানা দেয়। আকাশে চক্কর কাটতে থাকে পুলিশের হেলিকপ্টার। সম্প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, পুলিশ আসতেই সেখানকার বাসিন্দারা ভয়ে এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে লাফ দিয়ে পালাতে থাকেন। এর পর পুলিশ ও মাদর পাচারকারীদের মধ্যে তীব্র গুলি বিনিময় হয়। আতঙ্কে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে পড়েন স্থানীয় বাসিন্দারা।
রিও পুলিশের দাবি, নিহতরা মাদক পাচার, চোরাচালান, হত্যাকাণ্ড ও অপহরণ—সহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।অভিযানে নিহতদের মধ্যে ২৪ জন দাগী অপরাধী রয়েছে। তারা পুলিশ অফিসারকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। যদিও, পুলিশ এদিন তাঁদের বক্তব্যের স্বপক্ষে কোনও তথ্যপ্রমাণ পেশ করেনি।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, গোপন সূত্রে তাঁরা জানতে পেরেছিল, মাদক পাচারকারীরা তাদের চক্রের জন্য শিশুদের সংগ্রহ করছে। এদিনের অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল ওই শিশুদের ধমকে-চমকে দলে যোগ দেওয়ানো থেকে মাদকপাচারকারীদের আটকানো। এক মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা সেখানে গিয়েছিলাম ওই মানুষগুলিকে আশ্বাস দিতে, যারা পাচারকারীদের সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছেন।’
পুলিশ আরও জানিয়েছে, এদিনের অভিযানে অংশ নিয়েছিল প্রায় ২০০ জন অফিসার। তার আগে, বিগত কয়েকমাস ধরে তদন্ত চলেছে। অভিযান থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০টি বন্দুক ও প্রচুর পরিমাণ মাদক বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তবে পুলিশের এই অভিযানকে তীব্র সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। এর আগে, ২০০৫ সালে বাইশাদা বস্তিতে পুলিশি অভিযানে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০০৭ সালে আরেকটি অভিযানে মারা গিয়েছিল ১৯ জন।
পুলিশের দাবি, মন্ত্রককে এই অভিযান সম্পর্কে আগেই অবগত করা হয়েছিল। যদিও মন্ত্রকের দাবি, অভিযান শুরু হওয়ার পর তারা জানতে পারে।
সম্প্রতি, ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, অতিমারীর মধ্যে যথাসম্ভব এই অভিযান এড়িয়ে চলতে। অত্যান্ত প্রয়োজন ছাড়া এই পরিস্থিতির মধ্যে কোনও মাদক-বিরোধী অভিযানের প্রয়োজন নেই। তা সত্ত্বেও, রিও পুলিশ বৃহস্পতিবার এই অভিযান চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশের এই অভিযানের তীব্র সমালোচনা করেছে অ্যামনেস্টি—সহ বিভিন্ন মানবাধিকার ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
পুলিশের এই অভিযানকে বিভিন্ন মহলের তরফে ভয়াবহ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।ব্রাজিলের সবচেয়ে হিংসাপ্রবণ রাজ্যগুলোর মধ্যে পড়ে রিও ডি জেনেরিও। এই শহরের বিস্তৃত এলাকা অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে। এই অপরাধীদের অনেকেই শক্তিশালী মাদকপাচারকারী চক্রের সঙ্গে যুক্ত।পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, ২০২০ সালে রিও-তে বিভিন্ন অভিযানের পুলিশের হাতে নিহত হয়েছে ১,২৩৯ জন।