দত্তক গ্রহণ অনাথ শিশুদের ভালোবাসা, যত্ন এবং একটি স্থায়ী বাড়ি পাওয়ার সুযোগ করে দেয়। সব শিশুর একটি স্থিতিশীল এবং ভালোবাসা পূর্ণ পারিবারিক পরিবেশে বড় হওয়ার অধিকার থাকে। অনাথদের ক্ষেত্রে সেই অধিকারটিই নিশ্চিত করে দত্তক প্রক্রিয়া। যদিও ভারতের সামাজিক কাঠামো এবং এত দিনের আইনি মতে মনে করা হত, শিশুদের জন্য এই ধরনের স্থিতিশীল, ভালোবাসাপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশ প্রদান করতে পারেন শুধু বিষম লিঙ্গে বিবাহিত যুগলরাই। সেই ধারণায় যে বদলের সময়ে এসেছে, তা প্রমাণ করে দিল দেশের প্রধান বিচারপতির মন্তব্য। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এমনই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
(আরও পড়ুন: 'শহুরে ধারণা নয় সমকামিতা… বিয়েকে অপরিবর্তনীয় প্রতিষ্ঠান বলা ভুল', যা বললেন CJI)
প্রধান বিচারপতির মত, সমকামী যুগলও সন্তান দত্তক নিতে পারেন। এমনকী অবিবাহিত যুগলও এবার সন্তান দত্তক নেওয়ার অধিকার পাবেন। Central Adoption Resource Authority (CARA)-র তরফে এত দিন যে সমকামীদের সন্তান দত্তকে সায় দেওয়া হত না, তা সংবিধানের আর্টিক্যাল ১৫-কে অমান্য করা বলেও মনে করেছেন প্রধান বিচারপতি।
কী বলা হয়েছে আর্টিক্যাল ১৫-তে? বলা হয়েছে, রাষ্ট্র শুধু মাত্র ধর্ম, বর্ণ, জাতপাত, লিঙ্গ, জন্মস্থান বা এগুলির যে কোন একটির ভিত্তিতেও কোন নাগরিকের প্রতি বৈষম্য করবে না। আর সেই কথাকে যদি মান্যতা দিতে হয়, তাহলে সমকামী যুগলকেও সন্তান দত্তক নেওয়া থেকে আটকানো যাবে না।
(আরও পড়ুন: ‘নারীকে বিয়ে করতেই পারেন রূপান্তরকামী পুরুষ’, সমলিঙ্গ সম্পর্ককে সুপ্রিম স্বীকৃতি)
ভারতে দত্তক নেওয়ার আইনি কাঠামো প্রাথমিকভাবে জুভেনাইল জাস্টিস আইন, ২০১৫ এবং শিশুদের দত্তক নেওয়ার নির্দেশিকা, ২০১৫ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। সেই আইন এবং নির্দেশিকা অনুযায়ী, ভারতে সমকামী যুগলদের এত দিন ধরে সন্তান দত্তক নেওয়ার অনুমতি ছিল না। ভারতে দত্তক নেওয়ার আইন শুধুমাত্র বিষমকামী দম্পতিদের দত্তক নেওয়ার যোগ্য বলে স্বীকৃতি দিচ্ছিল।
(আরও পড়ুন: 'CJI-এর সঙ্গে সহমত নই', সমলিঙ্গে বিবাহ মামলার রায়ে বললেন সুপ্রিম বিচারপতি রবীন্দ্র ভাট)
২০১৮ সালের এক যুগান্তকারী রায়ে ভারতে সমকামিতাকে অপরাধমুক্ত করার পথ প্রশস্ত হয়। তার পর থেকেই অনেকে বলছিলেন, এবার সন্তান দত্তক নেওয়ার নিয়মের ক্ষেত্রে বদল কাঙ্ক্ষিত। প্রধান বিচারপতির কথাতেও এবার তেমনই ইঙ্গিত।
প্রাথমিক ভাবে নিজের রায়ে দেওয়ার সময়ে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, CARA আইন না রাখা উচিত, কারণ এটি আর্টিক্যাল ১৫-র পরিপন্থী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত রায়দানের সময়ে বিচারপতিদের মধ্যে ৩-২ ভোটে CARA আইনটি বলবৎই থাকে। আপাতত এই নিয়মে কোনও বদল হচ্ছে না।