পঞ্চম দফার বৈঠকেও মিলল না কোনও সমাধানসূত্র। বরং তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে অনড় থাকলেন কৃষক সংগঠনের নেতারা। একইসঙ্গে আবারও কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে বসবে কিনা, তা নিয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেননি তাঁরা।
শনিবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে শুরু হয় কেন্দ্র ও কৃষকদের পঞ্চম দফার বৈঠক। সূত্রের খবর, বৈঠকের শুরুতেই বিভিন্ন কৃষক সংগঠনের ৪০ জন প্রতিনিধিকে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমর আশ্বাস দেন যে আন্তরিক আলোচনার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কেন্দ্র। বলেন, ‘কৃষক নেতাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনায়’ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কেন্দ্র এবং ‘কৃষকদের ভাবাবেগে আঘাত করতে চায় না’ নরেন্দ্র মোদী সরকার। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী তথা পঞ্জাবের সাংসদ সোমপ্রকাশ আশ্বাস দেন, ‘খোলা মনে আপনাদের যাবতীয় উদ্বেগ দূর করতে তৈরি আমরা।’
যদিও নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকেন কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। চা বিরতির পর বৈঠক শুরু হলে তাঁরা হুঁশিয়ারি দেন, তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের বিষয়ে যদি কেন্দ্র ইচ্ছুক না হয়, তাহলে তাঁরা বৈঠক ছেড়ে চলে যাবেন। শেষপর্যন্ত তাঁদের আশ্বস্ত করে বৈঠকে চালিয়ে যেতে থাকেন কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা।
সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, মন্ত্রীদের প্রস্তাবিত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কৃষক সংগঠনের নেতাদের কিছুটা মতভেদ তৈরি হয়। অপর এক সূত্র জানিয়েছেন, খড় পোড়ানোর জন্য কৃষকদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা এবং কয়েকজন কৃষিকর্মীর বিরুদ্ধে যে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তা তুলে নেওয়ারও প্রস্তাব দেয় কেন্দ্র। পরে তিন-চারজনের দল করে কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন মন্ত্রীরা।
তাতেও অবশ্য কোনও লাভ হয়নি। বরং বৈঠকের শেষ লগ্নে হাতে ‘হ্যাঁ বা না' প্ল্যাকার্ড নিয়ে চুপ করে ছিলেন কৃষকদের প্রতিনিধিরা। অর্থাৎ কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে যে অনড় থাকছেন তাঁরা, তা স্পষ্ট দেওয়া হয়। সূত্রের খবর, আগামী ৯ ডিসেম্বর (বুধবার) আবারও বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্র। কৃষক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন যে লিখিতভাবে কেন্দ্রের অবস্থান পাঠাতে হবে। তার ভিত্তিতে আবারও বৈঠকে বসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের রাকেশ তিকাইত বলেন, 'সরকার একটি খসড়া তৈরি করবে এবং আমাদের দেবে। তারা জানিয়েছে যে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হবে না। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে আমরা জানিয়েছি যে আইনও ফিরিয়ে নিতে হবে। আগের ঘোষণা মতোই ভারত বনধ হবে।'
অন্যদিকে, শনিবারের বৈঠকের পরও ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে আশ্বাস নিয়ে কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, 'আমরা বলেছি যে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য থাকবে। তাতে কোনও বিপদ নেই। তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার বিষয়টি ভিত্তিহীন।' কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় নরেন্দ্র মোদী সরকার কতটা প্রতিজ্ঞ, তা জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিক্ষোভরত কৃষকদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আর্জি জানাতে চাই। যাতে এই ঠান্ডায় তাঁদের অসুবিধার মুখে পড়তে না হয় এবং দিল্লিবাসীও যেন বিনা সমস্যায় জীবনযাপন করতে পারেন।’