কেন্দ্রীয় সরকারের চার ধাম সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের জেরে উত্তরাখণ্ডে হিমালয়ের কমপক্ষে ১০টি এলাকা নতুন করে ধসপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনায় ৮২৬ কিমি দীর্ঘ চার ধাম সড়ক প্রকল্প নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানিয়েছিলেন, ওই প্রকল্পের কারণে উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ পার্বত্য পরিবেশমণ্ডলের ভারসাম্য নষ্ট হবে। গত মঙ্গলবার বিষয়টি ফের সুপ্রিম কোর্টে আলোচিত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে চলতি বর্ষায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের চার তীর্থস্থান কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, গঙ্গোত্রী ও যমুনোত্রী সংযোগকারী ১২,০০০ কোটি টাকা বাজেটে নির্মীয়মান এই সড়ক প্রকল্পে ভয়াবহ ধসের ফলে বেশ কিছু জায়গায় যান চলাচল ব্যাহত হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে নিয়োজিত ভূতাত্ত্বিক নবীন জুয়াল নেতৃত্বাধীন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি জানিয়েছে, ‘হৃষিকেশ থেকে চাম্বা যাওয়ার পথে এক-দুই জায়গায় ধস আগেও নেমেছে, কিন্তু বর্তমানে তার মাত্রা অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে কুঞ্জপুরী এলাকায় স্থায়ী ধসপ্রবণ এলাকা তৈরি হয়েছে। অলকানন্দা উপত্যকায় এমনই আর এক নতুন স্থায়ী ধসপ্রবণ অঞ্চলে রূপান্তরিত হয়েছে সাকনিধর। উপত্যকার যত উপরে ওঠা যায়, ততই বাড়ে ধসের পরিমাণ।’
আমদাবাদের ফিজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরির প্রাক্তন এক পর্বত বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, কীর্তিনগর-শ্রীনগর, চামোলি থেকে ভীমতলা এবং বিরহী থেকে মায়াপুরীর মতো পথে আকছার ধস নামছে। এ ছাড়া জলাধার নির্মাণের কারণে ফারাসু গ্রামের গাছে বৃষ্টি হলেই রাস্তা বসে যাচ্ছে।
উত্তরাখণ্ড সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের একজিকিউটিভ ডিরেক্টর পীযূষ রৌতেলাও এ বিষয়ে একমত হয়ে জানিয়েছেন, ‘পাহাড়ের স্বাভাবিক ঢালে কোনও পরিবর্তন হলে ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং ধস নামে। পাঁচিল তুলে সাময়িক সমাধান মিললেও পাহাড়ি ঢালের ভারসাম্য না ফেরা পর্যন্ত ধস থামানো অসম্ভব হয়। এর জন্য দীর্ঘ সময় লাগাও বিচিত্র নয়।’
এর ওপর গত অগস্ট মাসে অস্বাভাবিক হারে বৃষ্টিপাতের কারণে ধস সমস্যা জটিলতর রূপ নিয়েছে। তবে অএখনও পর্যন্ত ধস সম্পর্কে সবিস্তারে তথ্য মাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন রৌতেলা। তাঁর দাবি, বর্ষা শেষ না হলে তা পাওয়া অসম্ভব।
চার ধাম পরিযোজনা প্রকল্পে পাহাড় আড়াআড়ি ভাবে কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন উত্তরাখণ্ডের পরিবেশবিদ মল্লিকা ভানোট। তাঁর মতে, এর ফলেই পাহাড়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ধসের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘যদি সরকারি কোনও প্রকল্প সাধারণের জীবনে বিপদ ডেকে আনে, তবে তাকে উন্নয়ন বলা যায় না।’
গত ২৪ অগস্ট হৃষিকেশ-শ্রীনগর সড়কে তেহরি গড়ওয়াল জেলার কৌডিয়ালায় ধস চাপা পড়ে প্রাণ হারান তিন জন। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের এক ধসে আরও ৯ জনের সঙ্গে মারা যান সুপ্রিম কোর্টে চার ধাম প্রকল্পের বিরুদ্ধে আবেদনকারী উমা জোশি। ২০১৮ সালে ধস চাপা পড়ে মৃত্যু হয় ৭ নির্মাণ শ্রমিকের। ঘটনায় আরও চার জন জখম হন।
সুপ্রিম কোর্ট নিয়োজিত কমিটি তার রিাপোর্টে জানিয়েছে, পিথোরাগড় ও হৃষিকেশের মধ্যে সংযোগকারী জাতীয় সড়কে ১৭৪টি নতুন কাটা পাহাড়ের মধ্যে ১০২টিই ধসপ্রবণ এলাকা। এই সমস্ত অঞ্চলের ভূতাত্ত্বিক ও ভৌগোলিক চরিত্রেও বিস্তর হেরফের রয়েছে। সেই সমস্ত দিক যথাযথ বিবেচনা না করে সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা সামগ্রিক পার্বত্য পরিবেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।