শিশির গুপ্ত
মৌখিকভাবে সেনা সরানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তার সম্পূর্ণ ভিন্ন কাজ করছে চিন। পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘাতপূর্ণ এলাকা থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়ার পরিবর্তে কারাকোরাম পাস এবং আকসাই চিনে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা তৈরি করছে বেজিং। উন্নত করা হচ্ছে পরিকাঠামো। যা ভারতের সীমান্ত বরাবর সামরিক শক্তি বৃদ্ধির স্পষ্ট নির্দশন বলে মত কূটনৈতিক মহলের।
উপগ্রহ চিত্র এবং গোয়েন্দাবার্তা থেকে যে তথ্য মিলেছে, তাতে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ভারতীয় অধিকারিকরা। তাঁরা জানিয়েছেন, কারাকোরাম পাস পর্যন্ত আট থেকে ১০ মিটার চওড়া একটি বিকল্প রাস্তা তৈরি করেছে চিন। যার ফলে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দৌলত বেগ ওল্ডি সেক্টরের প্রবেশপথ পর্যন্ত যাতায়াতের সময় দু'ঘণ্টা কমে গিয়েছে। এক শীর্ষ মিলিটারি কমান্ডার বলেন, ‘আকসাই চিনের প্রায় সব কাঁচা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ভারী সরঞ্জাম নিয়ে বড় গাড়ি চলাচলের জন্য রাস্তার প্রস্থও বাড়ানো হয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু লাদাখে ৫৯৭ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সাজোয়াঁ গাড়ি এবং সৈন্য আনাগোনা বৃদ্ধি থেকেই ইঙ্গিত মিলেছে যে ভারতীয় সেনার সঙ্গে দীর্ঘ সংঘাতে জিইয়ে রাখতে প্রস্তুতি সেরে রেখেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)।
শুধু তাই নয়, সীমান্ত পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে দেশের ভিতরের দিকে অংশগুলিতে পরিকাঠামো তৈরির গতিবিধি বাড়িয়েছে চিন। গোলমাডের কাছে মাটির নীচে একটি পেট্রল এবং তেল সঞ্চয়ের কেন্দ্র গড়ে তুলছে। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে সেই তেল সঞ্চয়ের কেন্দ্র প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হলেও তিব্বত রেলওয়ের মাধ্যমে তা লাহসার সঙ্গে যুক্ত। যা তিব্বত বরাবর ভারত সীমান্তে দীর্ঘ সময় চিনা সেনার ক্ষমতা বাড়াবে এবং ফৌজিদের খাবারের জোগান নিশ্চিত করবে।
সিকিম সীমান্তেও অব্যাহত রয়েছে চিনা গতিবিধি। সঙ্গে উদ্বেগ বাড়িয়েছে অরুণাচল প্রদেশ বরাবর প্যাং তা বায়ুঘাঁটিতে মাটির নীচে দুটি কেন্দ্র তৈরির কাজ। বিমানকে রাখার জন্য পাহাড়ের মধ্যে সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে চিন। লাহসা গঙ্গগার বায়ুঘাঁটিতেও একই ধরনের অস্তিত্ব মিলেছে। সঙ্গে সামরিক বিমানের সংখ্যাও বেড়েছে।