চিনে ফের ভয়ানক হারে করোনা বাড়ছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেদেশের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সেই বিষয়টাই তুলে ধরলেন মাহিন্দ্রা গোষ্ঠীর প্রধান আনন্দ মাহিন্দ্রা। তিনি বলছেন, 'এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে, সেদেশের ভ্যাকসিনগুলি মোটেও প্রয়োজনীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করতে পারেনি।'
জেনিফার জেং-এর একটি পোস্ট রিটুইট করেছেন আনন্দ মাহিন্দ্রা। জেনিফার একজন ইউটিউবার এবং ব্লগার। তিনি চিনের পরিস্থিতি ব্যাখা করে জানিয়েছেন, বর্তমানে চিনের কিছু হাসপাতালে আর কোনও শয্যা বাকি নেই। প্রবীণ রোগীরাও মেঝেতে শুয়ে আছেন। এতটাই খারাপ পরিস্থিতি।
আনন্দ মাহিন্দ্রা আরও একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন। তিনি জানতে চান, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেক থেকে কি কোনওভাবে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা যেতে পারে? সেই ক্ষমতা ভারতের বর্তমানে রয়েছে। নেটিজেনদের উদ্দেশে আনন্দ মাহিন্দ্রা প্রশ্ন করেন, 'আমরা কি একটি উদাহরণ দিয়ে দেখাতে পারি, যে কীভাবে একজন ভাল প্রতিবেশী হতে হয়?'
ব্লুমবার্গের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোভিড-আক্রান্ত চিনকে ভ্যাকসিন দিয়ে সাহায্য করতে রাজি। বাইডেন সরকার চিনকে ভ্যাকসিন পাঠাতে প্রস্তুত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, চিনের সরকার এখনও সেই অনুরোধ করেনি। এমনটাই জানালেন মার্কিন মুলুকের বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন।
ওয়াশিংটনে চিনা দূতাবাসের মুখপাত্র লিউ পেংইউ বলেন, 'বর্তমানে আমাদের দেশে(চিনের) চাহিদা মেটানোর মতো ভ্যাকসিনের স্টক স্টক রয়েছে। আপাতত বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হচ্ছে।'
গত ২২ ডিসেম্বর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম ঘেব্রেইসাসও চিনের পরিস্থিতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বেজিংকে দ্রুত এই সম্পর্কে বিশদ তথ্য দিতে অনুরোধ করেন। এর পাশাপাশি দেশের সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনসংখ্যার টিকাকরণেও জোর দেওয়ার আহ্বান জানান। চিকিত্সা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রক্ষার্থে সহায়তারও প্রস্তাব দেন। কিন্তু বেজিং থেকে সেভাবে কোনও সাড়াশব্দ মেলেনি। আরও পড়ুন: চিনে মারাত্মক বাড়ছে করোনা, ভারতে ওমিক্রন BF.7 নিয়ে ভয় কতটা? ৩টি জরুরি কথা
এমনিতেও চিনের সরকার সমস্ত খবর নিয়ন্ত্রিত ও গোপন রাখতেই পছন্দ করে। ফলে আসল পরিস্থিতির আঁচ পাওয়া বেশ কঠিন। সম্প্রতি, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য প্রদানকারী সংস্থা এয়ারফিনিটি একটি অনুমানমূলক পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। তাতে দাবি করা হয়, চিনে বর্তমানে COVID-19 থেকে সম্ভবত দিনে ৫ হাজারেরও বেশি প্রাণহানি হচ্ছে। সরকারি ডেটার তুলনায় যা অনেকটাই বেশি।
সংস্থার মতে, বর্তমানে যারা সংক্রামিত হচ্ছেন, তাঁদের সিংহভাগই বয়স্ক ব্যক্তি। চিন জুড়ে লক্ষ লক্ষ বয়স্ক মানুষ এখনও সম্পূর্ণরূপে টিকাপ্রাপ্ত হননি। এদিকে ভাইরাসের এই রূপটি বয়স্কদেরই বেশি হানা দিচ্ছে ও প্রাণ কাড়ছে।
চিনের টিকাকরণ পরিস্থিতি
চিনে শুধুমাত্র সেদেশে তৈরি ভ্যাকসিনই ব্যবহার করা হয়েছে। এটি অন্যত্র ব্যবহৃত mRNA ভ্যাকসিনের তুলনায় পুরানো প্রযুক্তির। mRNA ভ্যাকসিন সংক্রমণের বিরুদ্ধে তুলনামূলকভাবে বেশি সুরক্ষা প্রদান করে।
চিনে বেশিরভাগ ব্যক্তিই হয় করোনাভাক বা সিনোফার্মের তৈরি অনুরূপ ভ্যাকসিন পেয়েছেন। তবে সবমিলিয়ে সেদেশে প্রায় আরও পাঁচটি অন্য টিকা দেওয়া হয়েছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই টিকাগুলির তুলনামূলক কার্যকারিতা বিশ্বেষনের জন্য কোনও তথ্যই উপলব্ধ নয়। ফলে টিকাগুলি কতটা কার্যকর, আদৌ নিয়ে লাভ হবে কিনা, সেই গবেষণার সুযোগই নেই।
হংকং-এর একটি সমীক্ষায় mRNA ভ্যাকসিন এবং সিনোভাকের করোনাভাকের তুলনা করা হয়। তাতে বলা হয়, করোনাভাক নিলে(বিশেষত বয়স্কদের ক্ষেত্রে), আরও ভাল সুরক্ষার জন্য একটি তৃতীয় বুস্টার শট নেওয়া প্রয়োজন। করোনাভাক ভ্যাকসিনের সাধারণ কোর্স হল দু'টি শটের। পরে আরও একটি ঐচ্ছিক বুস্টার শট নেওয়া যেতে পারে।
চিনের সরকারি হিসাব বলছে, তাদের জনসংখ্যার ৯০ শতাংশই টিকা পেয়ে গিয়েছেন। এদিকে মাত্র ৬০ শতাংশই বুস্টার ডোজ নিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যেই বুস্টার ডোজ না নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। চিনের সরকারি সিনহুয়া নিউজ এজেন্সি অনুযায়ী, ৮০ বছরের বেশি বয়সী প্রায় ৯০ লক্ষেরও বেশি চিনা ব্যক্তির তৃতীয় ডোজ নেওয়া হয়নি। চলতি মাসের শুরু থেকে টিকা দেওয়ার হার যদিও প্রায় ১০ গুণের বেশি বাড়ানো হয়েছে। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে দিনে ১০ লক্ষ টিকাকরণ সম্পন্ন হচ্ছে। আরও পড়ুন: সংক্রমণের ঢেউ আছড়ে পড়ার আগে করোনা টিকার বুস্টার ডোজ নিয়ে নয়া ভাবনা কেন্দ্রের
ভেলোরের ভাইরাস বিশেষজ্ঞ ডাঃ গগনদীপ কাং বললেন, বয়স্কদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত্। চিনে মার্কিন সিডিসি অফিসের কর্তা রে ইপের দাবি, চিন ভাইরাস ছড়ানো আটকাতে তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর পিছনে যুক্তি হল যে, অল্পবয়সীরা বেশি চলাফেরা করেন।