আজ সকালে কেরলের কোচিতে খ্রিস্টানদের একটি ধর্মীয় সম্মেলনে পরপর বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনায় একজন মারা গিয়েছেন। অন্ততপক্ষে ২০ জন জখম হয়েছেন। এমন এক সময়ে অবশ্যে নিজের রাজ্যে নেই মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। গাজা ভূখণ্ডে ইজরায়েলের হামলার প্রতিবাদ জানাতে তিনি দিল্লি গিয়েছেন। ইজরায়েলর যুদ্ধের বিরুদ্ধে সিপিএম-এর তরফে আয়োজিত করা হয়েছিল এক জনসভার। বাম দলের দাবি, 'গাজায় গণহত্যা বন্ধ হোক'। সেখনে বিজয়ন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। (আরও পড়ুন: কয়েক মিনিটের মধ্যে পরপর বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল কোচি, মৃত ১, জখম ২০)
ইজরায়েল-হামাস যুদ্ধের জেরে গাজার পরিস্থিতি নিয়ে আজ বিজয়ন বলেন, 'প্যালেস্তাইনের জনগণের বিরুদ্ধে যে অমানবিক গণহত্যা চলছে তার প্রতিবাদে আমরা এখানে একত্রিত হয়েছি। নিজেদের ভূমির জন্য লড়াই করা প্যালেস্তিনীয় জনগণের সাথে একাত্মতার না দেখিয়ে ভারত সরকার ইজরায়েলকে সমর্থন করছে। আমরা এর প্রতিবাদ করতে এখানে এসেছি। আমাদের পরীক্ষিত নীতির স্পষ্ট লঙ্ঘন এটা। গাজায় সংঘর্ষ বিরতির পক্ষে রাষ্ট্রসংঘে যে প্রস্তাব পেশ হয়েছিল, তার ওপর আলোচনা থেকে ভারত বিরত থেকেছে। তারা ইজরায়েল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন করেছে। এটা সত্যিই মর্মান্তিক।'
এদিকে সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি আজ এই বিষয়ে বলেন, 'প্যালেস্তিনীয়দের বিরুদ্ধে গাজা উপত্যকায় ইজরায়েল যে বর্বরতা চালাচ্ছে তা অবিলম্বে বন্ধের দাবিতে আজ বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরো কেন্দ্রীয় কমিটি। এখনও পর্যন্ত যে পরিসংখ্যান সরকারি ভাবে সামনে এসেছে তাতে জানা গিয়েছে, আট হাজারেরও বেশি লোক মারা গিয়েছে। এর মধ্যে আর্ধেকেরও বেশি হল শিশু। গাজায় শিশুদের টার্গেট করে হত্যা করা হচ্ছে। সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ধ্বংসস্তূপের নীচে কত লাশ চাপা পড়ে আছে তা অনুমান করা যাচ্ছে না। এটা অমানবিক বর্বরতা। এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে... মানবতার জন্য রাষ্ট্রসংঘের প্রস্তাব অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।'
গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামলা চালিয়েছিল প্যালেস্তাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এরপর থেকে ইজরায়েলও জবাবি হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। এই আবহে গত পরশু রাষ্ট্রসংঘে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ইজরায়েল যেন শান্তির পথে হাঁটে। এই প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকে ভারত। ভারত ছাড়াও আরও ৪৩টি দেশ এই প্রস্তাবের ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকে। জানা গিয়েছে, জর্ডান এই প্রস্তাবের খসড়া পেশ করেছিল। তবে তাদের সেই প্রস্তাবে হামাসের কোনও উল্লেখ ছিল না। এই আবহে এই ভোটাভুটি থেকে বিরত থাকে ভারত। এদিকে পরে কানাডার তরফে প্রস্তাব পেশ করা হয়, এই খসড়ায় একটি প্যারাগ্রাফ জুড়ে দেওয়া হোক যাতে হামাসের নিন্দা জানানো হোক। কানাডার সেই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয় ভারত।
ভোটদান থেকে বিরত থাকা নিয়ে নিজেদের যুক্তি দিয়েছে ভারত। এই নিয়ে রাষ্ট্রসংঘে নিযুক্ত ভারতের ডেপুটি স্থায়ী প্রতিনিধি যোজনা প্যাটেল বলেন, 'এই বিশ্বে সব বিবাদই আলোচনার মাধ্যমে মেটানো উচিত। এই আবহে হিংসা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকা উচিত রাষ্ট্রসংঘের। হিংসার মাধ্যমে রাজনৈতিক লক্ষ্য পূরণ করলে তা দীর্ঘমেয়াদী হয় না।' ভারতীয় প্রতিনিধি আরও বলেন, 'সন্ত্রাসবাদ একটি রোগ। কোনও সীমান্ত, জাতি বা দেশ মানে না সন্ত্রাসবাদ। তাই যুক্তি যাই হোক না কেন, কোনও হিংসার পক্ষে সায় দেওয়া উচিত না বিশ্বের। আমাদের একত্রিত হয়ে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। আমরা কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদকেই যেন সমর্থন না করি।' এদিকে এই চলমান সংঘর্ষের জেরে সাধারণ মানুষের মৃত্যু নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত। এই আবহে উভয় পক্ষকেই দায়িত্ববোধ প্রদর্শনের পরামর্শ দিয়েছিল ভারত।