নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে সদ্যজাত বাচ্চাদের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তাঁরা। মায়ের মতো করে নার্সদের সদ্যজাতদের প্রাণ রক্ষার মুহূর্ত চোখে জল এনেছে নেটিজেনদের।
১৯৯৯ সালে যাঁরা তাইওয়ানের ভয়াবহ ভূমিকম্প দেখেছেন, তাঁরাই একমাত্র বলতে পারবেন ২০২৪ এ দাঁড়িয়ে ওই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠিক কতটা মর্মান্তিক। গত, বুধবার তাইওয়ানে ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্পের শক্তিশালী কম্পন অনুভূত হয়েছে। খুব কম্পনের পর আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার পর প্রত্যেকেই নিজ নিজ প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ স্থানে ছুটে চলে যাচ্ছিলেন। হাসপাতালের নার্সরাও দৌড়াদৌড়ি করছিলেন। এত কিছুর মধ্যে দুই জন নার্স কিন্তু সম্পূর্ণভাবে বাচ্চাদের খেয়াল রেখেছিলেন। তারই ভিডিয়ো এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
কী দেখা গিয়েছে ভাইরাল ভিডিয়োতে
ভূমিকম্পের সময় সবাই পালিয়ে গেলেও সদ্যজাত বাচ্চাদের কেবিনে দৌড়ে এসেছিলেন চার নার্স। যদিও পরবর্তীতে ভূমিকম্পের মাত্রা আরও তীব্র হতে দেখে তৃতীয়জনও চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি তিনজন নিজেদের জায়গা থেকে কিন্তু এক বিন্দুও সরেননি। শিশুদের বাঁচাতে নিজেদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে ধরে রেখেছিলেন তাদের। তাইওয়ানের রাজধানী তাইপেইয়ের একটি হাসপাতালের ঘটনা এটি। হাসপাতালের সিসিটিভিতে এই ভিডিয়োটি ধরা পড়েছে, যা দেখে সারা বিশ্ববাসী এই নার্সদের স্যালুট করছে।
ফোকাস তাইওয়ান নামের একটি ইউটিউব চ্যানেল এই নার্সদের সম্পর্কে লিখেছে যে বুধবার সকালে যখন একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে তখন তাইপেই প্রসূতি ওয়ার্ডের চারজন কর্মী অন্যদের মতো নিরাপদ আশ্রয় নেননি। পরিবর্তে তাঁরা ১২ জন শিশুকে দোলনা ধরে স্থির করার চেষ্টা করেছিলেন। কাঁপুনি বন্ধ হওয়া পর্যন্ত বাচ্চাদের ধরে রেখেছিলেন তাঁরা। এই নার্সদের একজন সিএনএকে বলেছেন যে তিনি এবং তাঁর সহকর্মীরা কেবল নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা যা করেছেন তা কর্তব্য। শিশুদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে, একজন নার্স বলেছিলেন যে তিনি আশা করেন যে এই শিশুরাও বড় হয়ে অন্যদের প্রতি সদয় হবে।
- তাইওয়ানে ত্রাণ কাজ অব্যাহত রয়েছে
বুধবার তাইওয়ানে শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চলছে। উদ্ধারকর্মীরা নিখোঁজদের খোঁজে ব্যস্ত। গত পঁচিশ বছরে এটাই তাইওয়ানে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অনেক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অনেক স্থানে পাথর পিছলে বড় দুর্ঘটনারও খবর এসেছে। ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত নয়জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। প্রায় ১৫০ জন এখনও অজ্ঞাত। ভূমিকম্পে সৃষ্ট দুর্ঘটনায় আহত এক হাজারেরও বেশি মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাইপেই মেয়রের মতে, ভূমিকম্পে ৪৮টি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিছু ভেঙে পড়া ঠেকাতে ভবনের চারপাশে নির্মাণসামগ্রী রাখার কাজ অনবরত চলছে। স্বাস্থ্য ও কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাথরের খনিতে কাজ করা শ্রমিকরাও আটকা পড়েছেন।