সোমবার স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে রাজস্থান পুলিশ। দিল্লি থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, অ্যালকেমিস্টকে ২৫ কোটি টাকায় ২০০ কোটি টাকার হোটেল-সম্পত্তি পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, অবসরের পর এই অ্যালকেমিস্ট ARC-র বোর্ডেই যোগ দেন প্রতীপ চৌধুরী।
২০০৭ সালে জয়সলমীরের একটি হোটেল প্রকল্প সংক্রান্ত মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসবিআই-এর ঋণপ্রাপ্ত ওই পাঁচতারা হোটেল প্রকল্পের নাম ছিল 'গড় রাজওয়াদা'।
পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, গোডাবণ গোষ্ঠীকে হোটেল বানাতে ২৪ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়েছিল। সময়ে শোধ না হওয়ায় স্টেট ব্যাঙ্ক প্রথামাফিক সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে। কিন্তু বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির মোট বাজার মূল্য ছিল প্রায় ২০০ কোটি টাকা!
অভিযোগ, সেই ২০০ কোটি টাকার সম্পত্তিই মাত্র ২৫ কোটি টাকায় অ্যালকেমিস্ট অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে(ARC) বিক্রি করে দেয় SBI। সেই সময়ে প্রতীপ চৌধুরি স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান ছিলেন।
এদিকে ২০১৬ সালে দুটি হোটেল হাতে পায় অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠী। এদিকে তার পরের বছরেই হোটেল দুটির ভ্যালুয়েশন করা হয়। দেখা যায় দুটি হোটেলের নূন্যতম দাম ১৬০ কোটি টাকা হওয়া উচিত্। এদিকে সেটাই কার্যত জলের দরে বিক্রি করা হয়েছে অ্যালকেমিস্ট গোষ্ঠীকে।
পরে এই অ্যালকেমিস্টেই যোগ দেন SBI-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান
উল্লেখ্য, SBI থেকে অবসরের পর এই অ্যালকেমিস্ট অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন কোম্পানিতেই যোগ দেন প্রতীপ চৌধুরি। সেপ্টেম্বর ২০১৩-এ দুই বছরের মেয়াদের পর চেয়ারম্যান হিসাবে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। এর এক বছরের মাথায়, ২০১৪ সালের অক্টোবরে অ্যালকেমিস্ট ARC বোর্ডে যোগদান করেন প্রাক্তন SBI চেয়ারম্যান।
এই দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত অ্যালকেমিস্ট কর্তা অলোক ধীর পলাতক বলে জানিয়েছে পুলিশ।
একটি বিবৃতিতে, এসবিআই বলেছে, 'ARC-কে উল্লিখিত বিক্রি করার সময়ে সমস্ত যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল।' পুলিশি পদক্ষেপে ব্যাঙ্কাররা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এসবিআইয়ের আরেক প্রাক্তন চেয়ারম্যান রজনীশ কুমার বলেন, 'মিস্টার চৌধুরীর গ্রেপ্তারিতে গোটা ব্যাঙ্কিং ইন্ডাস্ট্রি ক্ষুব্ধ। এটা ঠিক হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কোনো দুর্নীতি নেই। ব্যাঙ্কিং ইন্ডাস্ট্রির সবাই তা জানে।'
পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের এক সিনিয়র ব্যাঙ্কার(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘যেখানে জালিয়াতি ধরার জন্য এতগুলি কমিটি রয়েছে, সেখানে আপনি কীভাবে একা চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করতে পারেন? বিচার বিভাগীয় পদক্ষেপ উদ্বেগজনক।’
দায়ের করা মামলায় প্রতীপ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪২০(প্রতারণা এবং অসাধুভাবে সম্পত্তি বিতরণে প্ররোচিত করা), ৪০৯(সরকারি কর্মচারী, বা ব্যাঙ্কার, বিক্রেতা বা এজেন্ট দ্বারা বিশ্বাস লঙ্ঘন) এবং ১২০বি (ফৌজদারি ষড়যন্ত্র) ধারায় অভিযোগ রয়েছে।
প্রতীপ চৌধুরী দুই বছরের জন্য SBI-এর চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে তাঁর দীর্ঘ চাকরিজীবনে তিনি SBI-এর আন্তর্জাতিক বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরের পদসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ব্যাঙ্কিং খাতে তাঁর প্রায় ৪০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি এসবিআই (কানাডা) টরন্টোতে প্রায় পাঁচ বছর ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এছাড়া মুম্বাইয়ের এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ডের প্রধান বিনিয়োগ আধিকারিকও ছিলেন।
তিনি CESC, কোয়েস, কসমো ফিল্মস, Iffco কিষান সঞ্চার লিমিডেট, অ্যালকেমিস্ট, স্পেনসার্স এবং অন্যান্য নামজাদা বেসরকারি সংস্থার বোর্ডে স্বাধীন পরিচালকের পদে ছিলেন।