ফাহমিদা খানম
আমার বাবা ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা শামসুল করিম খান। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে তিনি শহিদ হয়েছিলেন। আমার বয়স তখন সাড়ে ৩। যুদ্ধের বিশেষ স্মৃতি আমার মনে নেই। তবু আবছা কিছু কিছু দৃশ্য মনে পড়ে। এছাড়া মায়ের কাছেও অনেক গল্প শুনেছি। আমার আব্বা বিমানবন্দরে চাকরি করতেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন বলে পাকিস্তানিরা তাঁকে অনুসরণ করত পেছন থেকে। বাবা প্রায় দিনই বাড়ি ফিরে আমার মা-কে বলতেন 'আমাকে কেউ ফলো করছে'।
এক বন্দর থেকে আরেক বন্দরে বদলি করে দেওয়া হয় যাতে তিনি মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে কোনও ছক কষতে না পারেন। ভয়ানক অত্যাচার করা হয়েছিল আমাদের দেশের মানুষের ওপর। আমার বাবা সমসময় আতঙ্কে থাকতেন ঠিকই কিন্তু শত্রুকে ভয় পেতেন না। বঙ্গবন্ধুর ডাকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
পরে আমরা মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের মানুষ হিসেবে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে সাহায্য পেয়েছি। শেখ মুজিবুর রহমান আমার মা-কে চাকরি দিয়েছিলেন। সেই জন্য আমরা ভাই বোনেরা সারভাইব করতে পারি। মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে এখনও সাহায্য করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তাঁর হাত ধরেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ।
এটাই তো চেয়েছিলেন আমার শহিদ বাবা। সে সময় ভারতের ইন্দিরা সরকার পূর্ববঙ্গের প্রতিটা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। তাঁর প্রতি বাঙালি জাতির কৃতজ্ঞতা রয়েছে। বহু শরণার্থীকে তিনি আশ্রয় নিয়েছিলেন নিজের দেশে। যদিও আমাদের পরিবারকে ভারতে যেতে হয়নি। আমরা বাংলাদেশেই ছিলাম। এক সময় জানতে পারি আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে।