অনিশা দত্ত
কীভাবে সমালোচনার মোকাবিলা করা যায়? কীভাবে বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা পৌঁঁছে দেওয়া যায়? তা নিয়ে বিস্তারিত উপায় বের করার পাশাপাশি ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রের উপর বিভিন্ন প্রস্তাব দিল কেন্দ্রের একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী। নয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিশিষ্ট সেই গোষ্ঠী গণমাধ্যম ও জনসংযোগ কর্মসূচির নয়া কৌশল তৈরি করছে।
'সরকারি যোগাযোগ' নিয়ে আলোচনার জন্য গত ১৪ জুন থেকে সেই মন্ত্রিগোষ্ঠী ছ'বার আলোচনায় বসেছে। রাজ্য এবং জেলাস্তরে বিভিন্ন মাধ্যমের সঙ্গে সংযোগ, জনসংযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া এবং প্রভাবশালীদের সঙ্গে কাজ করার দীর্ঘকালীন কৌশলও আলোচ্য বিষয় ছিল।
'প্রসার ভারতী নিউজ সার্ভিস'-কে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা, 'সেরা আন্তর্জাতিক সরকারি সম্প্রচারকারী' সংস্থার মাপকাঠিতে 'ডিডি ইন্টারন্যাশনাল'-কে গড়ে তোলার মতো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, রাজ্য ও জেলাস্তরে প্রতিনিধি, সংবাদমাধ্যম, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরের শিক্ষাবিদদের সঙ্গে সংযোগ, সবধরনের মিডিয়ার ব্যবহার, তাদের ইতিবাচক খবর ও নথি প্রদানের মাধ্যমে ওই ১০ টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উপর নজর দিয়েছে মন্ত্রিগোষ্ঠী। সেই ১০ টি ক্ষেত্রের মধ্যে আছে 'আত্মনির্ভর ভারত', 'ডিজিটাল ইন্ডিয়া', 'স্কিল ইন্ডিয়া', পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির পরিকল্পনার বিষয়গুলি। প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য সচিবদের একটি গোষ্ঠীও তৈরি করা হয়েছে।
স্থানীয় স্তরে জনসংযোগের জন্য 'ন্যাশনাল সার্ভিস স্কিম', এনসিসির স্বেচ্ছাসেবক এবং দলের নেতাদের কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিগোষ্ঠীর পরামর্শ, বছরে দুটি জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করা উচিত প্রতিটি মন্ত্রকের। একইসঙ্গে অনুষ্ঠানের আগে একদিনের প্রচার এবং অনুষ্ঠানের পর একদিনের কভারেজ থাকবে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'এভাবে বছরে ৩০০ দিনের মতো সরকারের কোনও না কোনও অনুষ্ঠানের কভারেজ থাকবে।'
নাম গোপন রাখার শর্তে কেন্দ্রের এক আধিকারিক বলেন, 'আমরা কীভাবে আরও কার্যকরীভাবে (আমজনতার কাছে) পৌঁছাতে পারব, তা মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে বলে অনুভব করেছিলাম। সরকারের যোগাযোগে যে ফাঁকফোকর আছে, তা পূরণের জন্য একাধিক মন্ত্রক সেই প্রক্রিয়ায় সামিল ছিল। করোনাভাইরাসের সময় ছোটো সংবাদমাধ্যমগুলি তথ্য সংগ্রহ এবং ভিডিয়ো পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। আমাদের ভিডিয়োও শেয়ারের প্রয়োজন যে আছে, তা আমরা ঠিক করেছি।'
রবিশংকর প্রসাদ, প্রকাশ জাভরেকর, স্মৃতি ইরানি, এস জয়শংকর, কিরেণ রিজুজু, বাবুল সুপ্রিয়দের নিয়ে গঠিত সেই মন্ত্রিগোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়ার উপর জোর দিতে চেয়েছেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। প্রস্তাবে জানানো হয়েছে, 'সঠিক দিকে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি' প্রকাশের জন্য ক্রমাগত 'নেতিবাচক প্রভাবশালীদের' উপর নজর রাখতে হবে এবং 'ইতিবাচক প্রভাবশালীদের' সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে 'সরকারের সমর্থনে থাকা বা নিরপেক্ষ' যে সাংবাদিকরা সম্প্রতি চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদেরও চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে, যাতে বিভিন্ন মন্ত্রকে তাঁদের ব্যবহার করা যায়।
ডিজিটাল মিডিয়ার যাতে 'পক্ষপাতিত্ব না করে', তা নিশ্চিত করার জন্য আগেই পদক্ষেপগুলি করা হয়েছিল, তা নিয়েও প্রস্তাব দিয়েছে মন্ত্রিগোষ্ঠী। রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'মূলত বিদেশি বিনিয়োগের বিষয়টির জন্য ডিজিটাল মিডিয়ায় সংবাদ পরিবেশন যাতে পক্ষপাতমূলক না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের সীমা ২৬ শতাংশ বেঁধে দেওয়া এবং তা প্রণয়নের প্রক্রিয়া চলছে।'
ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সামনে একবার পুরো বিষয়টি তুলে ধরেছে মন্ত্রিগোষ্ঠী। রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তার ভিত্তিতে মন্ত্রিগোষ্ঠীতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন মোদী। ইতিমধ্যে যাবতীয় প্রস্তাবগুলি কীভাবে প্রণয়ন করা যায়, সেই বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার সচিবদের গোষ্ঠীর কাছে পরামর্শ চেয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক।
বিষয়টি নিয়ে এমএক্সএমআই ইন্ডিয়ার প্রতিষ্ঠাতা এবং এডিটর-ইন-চিফ প্রদ্যুমন মাহেশ্বরী বলেন, 'আরও উন্নত জনসংযোগের জন্য সরকারের পরিকল্পনায় কোনও ভুল নেই। সরকারি হোক বা বেসরকারি - যে কোনও প্রতিষ্ঠান সেটা করতে পারে। তবে সামান্য উদ্বেগও আছে। সুবিধাভোগের জন্য এখন মানুষরা আরও সরকারপন্থী হয়ে উঠতে পারেন। কারণ তাঁরা জানেন যে তাঁদের উপর নজর রাখা হচ্ছে।'