আয়কর রিটার্ন (ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন) দাখিল করার সময়সীমা এগিয়ে আসছে। আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যেই সেই কাজটা করতে হবে করদাতাদের। আর কয়েকবার আয়কর রিটার্নের সময়সীমা বাড়ানো হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তাতে এবার সম্ভবত সেই কাজটা করা হবে। তাই দেরি না করে দ্রুত আয়কর রিটার্ন ফাইল করে নিতে হবে করদাতাদের। তবে সেই কাজটা করার সময় অনেকেই কয়েকটি ছোটখাটো ভুল করে ফেলেন। যা ততটা বড় ভুল না হলেও বড় ক্ষতি হতে পারে। সেই ভুল নিয়েই সতর্ক করলেন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট এবং অডিটর চিরাগ চৌহান।
১) আয়কর রিটার্নের ভুল অপশন বেছে নেওয়া
চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জানিয়েছেন, ভুল আয়কর রিটার্ন বেছে নিলে নোটিশ মিলতে পারে। অনেক বেতনভোগী মানুষ আইটিআর ১ (ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নের প্রথম ফর্ম) বেছে নেন। কিন্তু আদতে তাঁদের আইটিআর২-র আওতায় আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হত। তাই আয়কর রিটার্নের অপশন বেছে নেওয়ার আগে পুরো বিষয়টা ভালোভাবে জেনে নিন।
আরও পড়ুন: Income Tax Tricks: ৭ লাখের বেশি রোজগার হলেও আয়কর লাগবে না! কত টাকা পর্যন্ত ছাড়? জানালেন সীতারামন
২) সুদের ক্ষেত্রে ছাড়ের সুযোগ না নেওয়া (ইন্টারেস্ট ডিডাকশন)
চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জানিয়েছেন, আয়কর আইনের ৮০টিটিএ এবং ৮০টিটিবি'র আওতায় সুদের ক্ষেত্রে যে ছাড় পাওয়া যায়, সেই ক্লেম করতে ভুলে যান অনেকে।
৩) দুটি বা ততোধিক জায়গা থেকে বেতন পেলেও একটি জায়গা থেকে দেখানো
চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জানিয়েছেন, কোনও করদাতা যদি একাধিক সংস্থা বা কোম্পানির থেকে বেতন পান, তাহলে সবগুলিই আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রে দেখাতে হবে। অর্থাৎ একাধিক সংস্থা বা কোম্পানি থেকে বেতন পেলে কোনওটিই বাদ দেওয়া যাবে না।
৪) বেসরকারি কোম্পনিতে শেয়ার থাকার বিষয়টি না দেখানো
চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জানিয়েছেন, আপনার যদি বেসরকারি কোম্পানিতে শেয়ারহোল্ডিং থাকে, তাহলে তা অতি অবশ্যই আয়কর রিটার্নের ক্ষেত্রে উল্লেখ করতে হবে। সেই কাজটা করতে ভুলে গেলে হবে না।
৫) বিদেশি সম্পত্তির উল্লেখ না করা
ওই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জানিয়েছেন, আয়কর রিটার্ন দাখিল করার ক্ষেত্রে ‘রেসিডেন্ট’ করদাতাদের বাধ্যতামূলকভাবে বিদেশি সম্পত্তির উল্লেখ করতে হবে। যাঁদের হাতে নির্দিষ্ট বিদেশি সম্পত্তি আছে। সেই সংক্রান্ত তথ্য এড়িয়ে গেলে চলবে না।
৬) এআইএস বা টিআইসি সংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে না দেখা অথবা আপডেট না করা
চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জানিয়েছেন, কোনও কোনও করদাতা আয়কর রিটার্ন ফাইল করার সময় 'অ্যানুয়াল ইনফরমেশন স্টেটমেন্ট' (এআইএস) বা 'ট্যাক্সপেপার ইনফরমেশন স্টেটমেন্ট' (টিআইএস) আপডেট করেন না। ভালো করে খতিয়ে দেখেন না এআইএস বা টিআইএস। সেই কাজটা অতি অবশ্যই করতে হবে।
৭) প্রবীণ নাগরিকদের চিকিৎসার কারণে খরচের উপর ছাড়
ওই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জানিয়েছেন, যে প্রবীণ নাগরিকদের মেডিক্যাল ইনসিওরেন্স নেই, তাঁরা চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচের ক্ষেত্রে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড়ের সুবিধা নিতে পারবেন। অর্থাৎ ৫০,০০০ টাকার 'ডিডাকশন' ক্লেম করতে পারবেন তাঁরা।
৮) ফর্ম ১৬-তে না করলেও আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় ডিডাকশন ক্লেম করতে পারবেন
ওই চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জানিয়েছেন, ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন ফাইলের সময় আয়কর আইনের ৮০সি, ৮০ডি থেকে ৮০ইউ আওতায় ডিডাকশনের সুবিধা পাবেন। 'হাউস রেন্ট অ্যালোওয়েন্স' বা HRA ক্লেম করতে পারবেন। তবে 'লিভ ট্রাভেল অ্যালোওয়েন্স' বা LTA ক্লেম করতে পারবেন না। তবে কী কী ডিডাকশন ক্লেম করতে পারবেন বা পারবেন না, তা আগেভাগেই জেনে নিন।
৯) ৩০ দিনের মধ্যে ইনকাম রিটার্ন যাচাই না করা
চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জানিয়েছেন, অনেকেই ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন আপলোড করলেও ৩০ দিনের মধ্যে যাচাই বা 'ভেরিফাই' করেন না। তাই ৩০ দিনের মধ্যে ইনকাম রিটার্ন যাচাই করতে হবে। যাতে ওই আয়কর রিটার্ন অবৈধ না হয়ে যায়।
১০) নথি ও প্রমাণপত্র সংরক্ষণ না করা
অনেকেই আয়কর রিটার্ন দাখিল করার পর নথি এবং প্রমাণ ঠিকমতো গুছিয়ে রাখেন না। তবে চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট জানিয়েছেন, যে সমস্ত ছাড় বা ডিডাকশন ক্লেম করা হয়েছে বা যে কোনও আয়কর রিটার্ন সংক্রান্ত নথি ১০ বছর সযত্নে রেখে দিতে পারলে ভালো হয়।
আরও পড়ুন: Income Tax Form 16: Form 16 ছাড়াই আয়কর রিটার্ন ফাইল করতে পারেন, জানেন প্রক্রিয়াটি