করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে অনেকে সরকারি কর্মচারী ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। তাঁদের জন্য সম্প্রতি এলটিসি ক্যাশ ভাউচার চালু করেছে কেন্দ্র। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মচারীরাও সেই সুবিধা নিতে পারেন।
বাড়ি বা অন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়ার জন্য একজন কর্মচারী এলটিসি এবং ১০ দিনের লিভ এনক্যাশমেন্ট পান। প্রতি চার বছরে দু'বার সেই সুবিধা পাওয়া যায়। টিকিটের খরচ করের আওতায় না পড়লেও লিভ এনক্যাশমেন্টের জন্য কর দিতে হয়। এবার করোনার জেরে যেহেতু অনেকেরই বাড়ি যাওয়া বা কোথাও বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা শিকেয় উঠেছে, তাই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা এলটিসির ভাড়া (ট্রেন বা উড়ানের ভাড়া) এবং লিভ এনক্যাশমেন্টর সমতুল্য নগদ নেওয়ার সুবিধা পাবেন। এলটিএ বা এলিটিসির করবিহীন অংশের পরিবর্তে কর্মচারীরা পণ্য কিনতে পারবেন। নিতে পারবেন পরিষেবা।
তবে সেই প্রকল্পের জন্য কর্মচারীকে লিভ এনক্যাশমেন্ট হিসেবে প্রাপ্য পুরো অর্থ এবং ট্রেন বা উড়ানের ভাড়া বাবদ প্রাপ্য অর্থের তিনগুণ খরচ করে পণ্য কিনতে হবে। আগামী বছর ৩১ মার্চের মধ্যে সেই টাকা খরচ করতে হবে। যে দ্রব্যগুলির জিএসটি ১২ শতাংশ বা তার বেশি, সেগুলির কেনার ক্ষেত্রেই এই সুবিধা মিলবে। কর্মচারীদের একটি ভাউচার নিতে হবে। যেখানে জিএসটি নম্বর এবং জিএসটি বাবদ কত টাকা দেওয়া হয়েছে, তার উল্লেখ থাকবে।
ট্রেন বা উড়ানের ভাড়া বাবদ প্রাপ্য অর্থের নিয়ম
১) যে কর্মচারীরা উড়ানের বিজনেস ক্লাসে যাতায়াতের সুবিধা পান : ৩৬,০০০ টাকা। (যাতায়াতের জন্য মাথাপিছু)।
২) যে কর্মচারীরা উড়ানের ইকোনমি ক্লাসে যাতায়াতের সুবিধা পান : ২০,০০০ টাকা। (যাতায়াতের জন্য মাথাপিছু)।
৩) যে কর্মচারীরা ট্রেনের যে ক্লাসে যাতায়াতের সুবিধা পান : ৬,০০০ টাকা। (যাতায়াতের জন্য মাথাপিছু)।
বেসরকারি ক্ষেত্রের এলটিএ থেকে সরকারের এলটিসি অনেকটাই আলাদা
একটি বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, ‘বেসরকারি ক্ষেত্রে লিভ ট্র্যাভেল অ্যালাওয়েন্সের থেকে সরকারের এলটিসি বেশ অনেকটাই আলাদা। যতক্ষণ না কোনও কর্মচারী কোথাও যাচ্ছেন, ততক্ষণ তিনি এলটিসির সুবিধা নিতে পারেন না। তিনি যদি ব্যর্থ হন, তাহলে তাঁর থেকে সেই অর্থ কেটে নেওয়া হবে। এমনকী তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাজনিত পদক্ষেপও করা হতে পারে। তিনি টাকা রেখে দেওয়ার ও কর দেওয়ার সুযোগ পাবেন না।’
সরকারের নিয়ম অনুযায়ী, এতদিন কর্মচারীদের কেবলমাত্র দুটি সুযোগ ছিল - ১) ঘুরতে যাওয়া এবং খরচ করা (হোটেল, খাবারের মতো বিষয়ের খরচ তিনি বহন করবেন) এবং ২) যদি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সেই সুবিধা না নেন, তাহলে তা পরিত্যাগ করা। অর্থ মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, এখন বিশেষ পদক্ষেপ হিসেবে তৃতীয় বিকল্প এসেছে - ‘ঘুরতে যাওয়া ছাড়াও অন্য কোথাও খরচ করা’।
আপনার কি সেই সুযোগ নেওয়া উচিত?
সেই প্রকল্প সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক। সরকারি কর্মচারী নয়া প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারেন অথবা তিনি সাধারণ এলটিসি বেছে নিতে পারেন। বর্তমান এলটিসির সময়সীমা ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত। তবে নয়া প্রকল্পের সুবিধার পেতে গেলে কর্মচারীদের ট্রেন বা উড়ান ভাড়া এবং লিভ এনক্যাশমেন্ট উভয়ই বেছে নিতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে ডিএসকে লিগালের পার্টনার নন্দ কিশোর বলেন, ‘মহামারীর ভয়ে যে কর্মচারীরা এলটিসির সুবিধা না নেওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন বা এলটিসি নেওয়ার সুযোগ পাননি, তাঁরা নয়া প্রকল্পের আওতায় এলটিসি পাওয়ার সুযোগ পেলেন। নাহলে যার মেয়াদ ২০২১ সালের ৩১ মার্চ পেরিয়ে যেত।’
অন্যদিকে ডিভিএস অ্যাডভাইজার এলএলপির প্রতিষ্ঠাতা এবং ম্যানেজিং পার্টনার দিবাকর বিজয়াসারথি জানান, সরকারি কর্মচারীরা এলটিসি বাবদ সর্বোচ্চ যে টাকা পান, তা নগদ ফেরত পাওয়ার সুবিধা পাবেন। সেটাই হল একমাত্র সুবিধা। অর্থাত্ এলটিসির সুবিধা নেওয়ার জন্য কর্মচারীরা যে পণ্য কিনতেন বা পরিষেবা ব্যবহার করতেন, তাতে ছাড় মিলবে। পিএসএল অ্যাডভোকেটস অ্যান্ড সলিসিটরসের পার্টনার অঙ্গন সাঁধু বলেন, ‘এলটিসি ভাড়া বাবদ যে টাকা ধরা হচ্ছে, তার রিইমবার্সমেন্টের উপর করছাড়, টিডিএস কাটার প্রয়োজন হবে না।’