কেন্দ্রীয় সরকারের সদ্য জারি করা তিন কৃষক আইনের উপকারিতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেন মহারাষ্ট্রের এক কৃষিজীবী। উৎপাদিত ফসল বিক্রি করার জেরে টাকা না দেওয়ায় দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলায় জয়ী হলেন মহারাষ্ট্রের ওই কৃষক। আদালতের নির্দেশে ফেরত পেলেন বকেয়া ২,৮৫,০০০ টাকা।
কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বারা গত সেপ্টেম্বর মাসে পাশ হওয়া কৃষক ফসল বিক্রি ও বাণিজ্য (প্রচার ও সুবিধার্থে) আইন ২০২০ অনুসারে, ফসল উৎপাদকের থেকে পণ্য কেনার তিন দিনের মধ্যে তার দাম বাবদ সমস্ত অর্থ মিটিয়ে দিতে হবে।
কেন্দ্রের তিন কৃষক আইনের বিরোধিতা করছেন একাধিক রাজ্যের কৃষিজীবীরা, যার মধ্যে অগ্রগণ্য পঞ্জাব। তাঁদের দাবি, এর ফলে তাঁদের দর কষাকষির ক্ষমতা লোপ পাবে এবং কৃষকদের বঞ্চিত করে বড় সংস্থার একচেটিয়া ব্যবসার পথ সুগম হবে। তবে মহারাষ্ট্রের কৃষক জিতেন্দ্র ভোই এই আইনের সুবাদেই শেষমেষ বকেয়া অর্থ উদ্ধার করতে সফল হয়েছেন। কৃষক আইন পাশ করার আগে পর্যন্ত বকেয়া অর্থ উদ্ধারে চাষিদের হাতে কোনও আইনি অস্ত্র মজুত ছিল না।
গত গ্রীষ্মে মহারাষ্ট্রের ধুলে জেলায় শিরপুর তহশিলের অন্তর্গত ভাটানে গ্রামে তাঁর ১৮ একরের খেতে ভুট্টা ফলিয়েছিলেন ভোই। ১৯ জুলাই খেতের মোট ২৭০.৯৫ কুইন্টাল ভুট্টা বিক্রির উদ্যোগ নেন কৃষক। এই বাবদ জনৈক সুভাষ ভানি ও অরুণ ভানির সঙ্গে প্রতি কুইন্টাল ১,২৪০ টাকায় বিক্রি করার জন্য তিনি চুক্তিবদ্ধ হন।
এই দুই ব্যবসায়ী আদতে মহারাষ্ট্র সীমান্ত সংলগ্ন মধ্য প্রদেশের বারওয়ানি জেলার খেতিয়া গ্রামের বাসিন্দা। ফসলের মোট দাম ধরা হয় ৩,৩২,৬১৭ টাকা। ২৫ হাজার টাকায় বায়না করে এবং ১৫ দিনের মধ্যে সব টাকা শোধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে খেত উজাড় করে ফসল নিয়ে যান দুই ব্যবসায়ী। বকেয়া টাকা উল্লেখ করা সেই রশিদ আদালতে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রের সঙ্গে দিয়েছেন ভোই।
চার মাস বকেয়া টাকা পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করার পরে অক্টোবরের প্রথম সম্তাহে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই কৃষক। হিন্দুস্তান টাইমস-কে তিনি ফোনে জানিয়েছেন, ‘বাজারের এক কেরানি আমাকে নতুন কৃষক আইনে এই অন্যায়ের বিহিত হবে বলে জানান। তিনি বলেছিলেন, বর্তমান আইনে তিন দিনের মধ্যে কৃষকের টাকা পাওয়া আবশ্য়িক করা হয়েছে। তখনই সিদ্ধান্ত নিই অভিযোগ দায়ের করার।’
কৃষক আইন অনুসারে, এই ধরনের অভিযোগ মহকুমাশাসক শুনে তিরিশ দিনের মধ্যে যথাযথ বিধান দেবেন। ভোইয়ের অভিযোগ পেয়ে অভিযুক্ত দুই ব্যবসায়ীকে খুঁজে বের করে মহকুমা প্রশাসন। শুনানির পরে তাঁদের অপরাধ সংগঠনের জন্য দোষী সাব্যস্ত করার পরে গ্রেফতারের প্রস্তাব গত ৫ অক্টোবর জেলাশাসকের কাছে পাঠান মহকুমাশাসক।
গত ৬ অক্টোবর ভোইয়ের অভিযোগের ভিত্তিতে সুভাষ ভানি ও অরুণ ভানিকে সমন পাঠায় জেলাশাসকের দফতর। অভিযোগ ও তার ভিত্তিতে সমগ্র শুনানির পরে কৃষকের বকেয়া অর্থ ওই দুই ব্যবসায়ীকে অবিলম্বে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেন জেলাশাসক।
তার জেরে সামান্য দর কষাকষির পরে পূর্ব নির্ধারিত অর্থের চেয়ে কিছু কম পরিমাণ দুই কিস্তিতে ভোইকে শোধ দেবেন বলে মুচলেকা দিতে হয়েছে ভানিদের। ৪ নভেম্বর প্রথম কিস্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন ভোই। ওই দিনই মামলাটি বন্ধ করে দেন জেলাশাসক।