তৃণমূলের সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ খারিজের সুপারিশ করেতে চলেছে সংসদীয় এথিক্স কমিটি। গতকাল কমিটির ৫০০ পাতার রিপোর্টের কপি সংবাদমাধ্যমের হাতে আসে। তাতেই মহুয়ার বিরুদ্ধে সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। সেই রিপোর্ট আজ গৃহীত হতে পারে কমিটিতে। জানা গিয়েছে, রিপোর্টে মহুয়ার 'কীর্তি'কে 'অত্যন্ত আপত্তিকর, অনৈতিক, জঘন্য' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লার কাছে জমা দেওয়া হবে এই রিপোর্ট। এদিকে গতকালই বিজেপির নিশিকান্ত দুবে দাবি করেন, ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করা মামলায় তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত হতে চলেছে। লোকপালের নির্দেশে এই তদন্ত হবে বলে তিনি দাবি করেন এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে। এই ঘটনাবহুল বুধবারেই সংসদীয় এথিক্স কমিটির রিপোর্ট এবং যাবতীয় ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেন মহুয়া নিজেই। (আরও পড়ুন: কাঁটাতারে আটকায় না অনুপ্রবেশ, তাই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে BSF-এর ভরসা এবার মৌমাছি)
সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে মহুয়া ব্যঙ্গ করে লেখেন, 'লোকপাল অভি জিন্দা হ্যা'। এদিকে গতকাল ফের একবার 'পিটবুল' বিতর্ক উস্কে দেন মহুয়া। এর আগে একটি টিভিতে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় নিশিকান্ত দুবে-কে পিটবুল আখ্যা দিয়েছিলেন। আর গতকাল একটি পোস্টে মহুয়া লেখেন, 'জেনে খুশি হলাম যে মোদীজির লোকপাল এখনও আছেন। সেই লোকপালকে কাজে নামিয়েছে বিশেষ জাতের পিটবুল। গোদি মিডিয়ার কাছে আমার অনুরোধ, লোকপালকে প্রশ্ন করা হোক যে কে এই মামলা রেফার করেছে তার কাছে।'
আরও পড়ুন: সামান্য টাকাতেই দেখা যেত 'লাইভ সেক্স', মুম্বইয়ের ২ নারীর কীর্তিতে চোখ উঠল কপালে
এদিকে আজকে এথিক্স কমিটির বঠকের আগেই সংবাদমাধ্যম এথিক্স কমিটির রিপোর্টে সারমর্ম প্রকাশ করা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মহুয়া। একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে তিনি লেখেন, 'দেখে ভালো লাগল আদানি টিভির (এনডিটিভি) কাছে স্ট্যান্ডিং কমিটির অনৈতিক রিপোর্ট রয়েছে। এই রিপোর্ট গতকাল পেশ হওয়ার কথা কমিটির সামনে। তার আগেই তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত। মোদী আদানি ভাই ভাই, বাকি সব সংস্থা বাই বাই।'
উল্লেখ্য, এর আগে সিবিআই-এর কাছে মহুয়ার বিরুদ্ধে 'টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন' করার মামলায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন মহুয়ার প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহদরাই এবং বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। এদিকে এই বিতর্ক নিয়ে হলফনামা দিয়েছেন শিল্পগোষ্ঠী হিরানন্দানির সিইও দর্শন হিরানন্দানি। তাতে আরও চাপে পড়েছেন মহুয়া মৈত্র। হলফনামায় হিরানন্দানি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বদনাম করতে আদানি গ্রুপকে নিশানা করেছিলেন মহুয়া। আদানি গোষ্ঠীকে চাপে ফেলার মতো প্রশ্ন তৈরি করে দেওয়ার জন্য নাকি হিরানন্দানিকে সংসদের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন মহুয়া। হলফনামা অনুযায়ী, দর্শন হিরানন্দানির দাবি, আদানি গোষ্ঠীকে চাপে ফেলার মতো প্রশ্ন তৈরি করে দেওয়ার জন্য তাঁকে সংসদের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন। পরিবর্তে তাঁর থেকে মহুয়া বিলাসবহুল জিনিসপত্র নিতেন। হিরানন্দানি দাবি করেছেন, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ করার পথ বেছে নেন মহুয়া। কিন্তু স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে নীতি সংক্রান্ত বিষয়, প্রশাসনিক বিষয়ে মোদীকে আক্রমণের সুযোগ পাননি মহুয়া। সেজন্য আদানি গোষ্ঠীর মাধ্যমে মহুয়া প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণের পন্থা বেছে নেন।
হিরানন্দানি দাবি করেছেন, ২০১৭ সালে বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মহুয়ার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল তাঁর। সেইসময় বিধায়ক ছিলেন মহুয়া। ২০১৯ সালে সাংসদ হন মহুয়া। সেই সময় ব্যবসায়িক 'দ্বন্দ্ব' চলছিল আদানি এবং হিরানন্দনিদের মধ্যে। দর্শনের সংস্থার সঙ্গে চুক্তি না করে আদানি গোষ্ঠীর ধর্মা এলএনজির সঙ্গে চুক্তি করেছিল ইন্ডিয়ান অয়েল। এই আবহে আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্নমালা তৈরি কে দেওয়ার জন্য দর্শনকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন মহুয়া। এর জন্য তাঁকে সংসদের লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন মহুয়া। হলফনামায় দাবি কর হয়, ক্রমেই মহুয়ার সঙ্গে হিরানন্দনির সম্পর্ক ভালো হতে থাকে। পরে তাঁর থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করতে থাকেন মহুয়া। তাঁর ওপর নাকি মহুয়া চাপও সৃষ্টি করেছিলেন। এই আবহে মহুয়ার কথা মতো চলতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু এখন বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হওয়ায় তিনি নিজে থেকেই মুখ খুলেছেন বলে দাবি করেন হিরানন্দানি।