পুরুলিয়ার কাশীপুরে সাধুদের হেনস্থা করার ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই সরগরম জাতীয় রাজনীতি। এই নিয়ে একেবারে ফ্রন্টফুটে বিজেপি। কিছুটা হলেও চাপে তৃণমূল। ইতিমধ্যেই বারোজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যেই এই ঘটনা নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ব্যক্তিগত আক্রমণ করলেন রামমন্দিরের পুরোহিত।
শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্রের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস শনিবার পুরুলিয়া জেলায় সাধুদের উপর হামলার নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন। সংবাদসংস্থা এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পুরোহিত রাজ্যে ধর্মীয় শোভাযাত্রায় অতীতের হামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যখন ভাগওয়া অর্থাৎ গেরুয়া রঙ দেখেন তখন রেগে যান’।
তিনি বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেউ মুমতাজ খান নাম দিয়েছে। রামনবমী ও অন্যান্য ধর্মীয় শোভাযাত্রায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। তিনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভাগওয়া রঙ দেখলে রেগে যান এবং এ কারণেই তিনি এই ধরনের হামলা ঘটান। এ ধরনের হামলার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’
পুরুলিয়া জেলায় একদল সাধুকে গণপিটুনির একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বিজেপির আইটি সেল অমিত মালব্য দাবি করেছেন যে হামলাকারীরা ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত অপরাধী।
‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসনকালে শাহজাহান শেখের মতো সন্ত্রাসী রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা পায় এবং সাধুদের পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে’, বলে বিজেপি নেতার দাবি। মালব্য বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু হওয়া অপরাধ’।
পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ ব্যানার্জি পরে জানান, ‘গৌরাঙ্গডিহের কাছে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় সন্দেহভাজন ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি জানান, সাধুরা একটি গাড়িতে ভ্রমণ করছিলেন যখন তারা পুজোর জন্য স্থানীয় কালী মন্দিরে যাওয়ার পথে তিনজন মহিলার সামনে থামেন এবং তাদের কিছু জিজ্ঞাসা করেন’।
ঘটনার বিশদ বিবরণ দিতে গিয়ে পুলিশকর্তা বলেন,' কিছু ভাষাগত সমস্যার কারণে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল এবং মেয়েরা ভেবেছিল যে সাধুরা তাদের অনুসরণ করছে'।
তিনি আরও জানান, সাধুরা মেয়েদের হুমকি দিচ্ছে এমন ধারণায় স্থানীয় বাসিন্দারা হস্তক্ষেপ করে সাধুদের দুর্গা মন্দিরের কাছে নিয়ে যায়। পুলিশ জানিয়েছে, জনতা তাদের গাড়ি ভাঙচুর করে এবং সাধুদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে।
'এক সাধুর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে,' আশ্বাস দিয়েছেন এসপি ব্যানার্জি। তবে বিজেপি এই ঘটনার সঙ্গে মহারাষ্ট্রের পালঘরে সাধু হত্যার ঘটনাকে একসূত্রে যুক্ত করে রাজনৈতিক প্রচার শুরু করে দিয়েছে। প্রসঙ্গত, সামনেই রামমন্দিরের উদ্বোধন। সেখানে বিরোধীপক্ষের নেতারা যাবেন কি যাবেন না, সেই নিয়ে ইতিমধ্যেই চড়েছে রাজনীতির পারদ। তারমধ্যে সংক্রান্তির ঠিক আগে পুরুলিয়ায় সাধু নিগ্রহের ঘটনা যে নতুন মাত্রা যোগ করল, তা বলাই যায়।