ভারতে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বের আকরভূমি হিসেবে চিহ্নিত অযোধ্যা এবার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি গড়ার বিষয়েও নতুন নজির গড়তে চলেছে। মসজিদ গড়ার জন্য মুসলিমদের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন দেশ-বিদেশের বহু হিন্দু।
দীর্ঘমেয়াদী বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ মামলায় গত নভেম্বর মাসে রাম মন্দির নির্মাণের পক্ষে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি, মসজিদ গড়ার জন্য উত্তর প্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ডকে অযোধ্যা শহর থেকে ২০ কিমি দূরে ধন্যিপুর গ্রামে দেওয়া হয় ৫ একর জমি। সেখানে মসজিদ, হাসপাতাল, গ্রন্থাগারের পাশাপাশি নানান পরিষেবা তৈরির পরিকল্পনা করেছে ওয়াকফ বোর্ড। খুব তাড়াতাড়ি ধন্যিপুর গ্রামে প্রস্তাবিদ মসজিদ প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত জমি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে ওয়াকফ বোর্ডের সদস্যদের।
এর আগে অয়োধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণের জন্য চাঁদা তুলেছেন মুসলিমরা। পূর্ব অবস্থান থেকে সরে এসে গত ২ অগস্ট রাম মন্দিরের ভূমিপুজো ও শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মুসলিম সম্প্রদায়ের তিন বিশিষ্ট প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানায় রাম জন্মভূমি ট্রাস্টও।
মসজিদ গড়ার উদ্দেশে গঠিত ট্রাস্ট ‘ইন্দো-ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন’-এর মুখপাত্র আতর হুসেন জানিয়েছেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে সাড়া পাচ্ছি, তাতে আমরা অভিভূত। তাঁদের মধ্োয়ে ৬০ শতাংশ মানুষই হিন্দু।’
তিনি জানিয়েছেন, প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনের মতুলনায় অনেক বেশি অর্থ চাঁদা উঠবে। তবে আপাতত ব্যাঙ্ক !কাউন্ট খোলা হয়নি বলে শুধুমাত্র প্রতিশ্রুতিই তাঁদের সম্বল। লখনউতে ইতিমধ্যে নিজেদের অফিস খুলেছে ট্রাস্ট এবং আগামী সপ্তাহের মধ্যেই খোলা হবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং নিজস্ব ওয়েব পোর্টাল। তবে বিদেশি অর্থ প্রক্রিয়াকরণে কিছু সময় ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাস্টের সদস্যরা।
পাশাপাশি, অনেকেই ওই জমিতে মসজিদ নির্মাণের বিরুদ্ধে মত জানাতে শুরু করেছেন। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীকে লেখা দুই পাতার চিঠি লিখে ধন্যিপুরের জমিতে মসজিদের পরিবর্তে হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন জনপ্রিয় কবি মুনাব্বর রানা।
তার বদলে নিজের পারিবারিক সূত্রে পাওয়া রায় বরেলি জেলায় সাই নদীর তীরের ৫.৫ একর জমি মসজিদ নির্মাণের জন্য দান করার প্রস্তাব দিয়েছেন রানা। তাঁর যুক্তি, সরকারি দানে পাওয়া অথবা দখল করা জমিতে মসজিদ নির্মাণ করা যায় না। তাই নিজের জমি সে কাজে দান করতে চেয়েছেন বর্ষীয়ান কবি। যদিও সেই প্রস্তাব শীর্ষ আদালতের নির্দেশের পরিপন্থী বলে তা খারিজ করেছে ওয়াকফ বোর্ড নির্মিত ট্রাস্ট।
মসজিদের সঙ্গে সরকারের থেকে পাওয়া জমিতে তৈরি হতে চলেছে দেশের প্রথম ইন্দো-ইসলামিক গবেষণা কেন্দ্র, যাতে থাকবে একটি গ্রন্থাগার, মিউজিয়াম ও গবেষণা কেন্দ্র। ভারতীয় সংস্কৃতিতে হিন্দু ও মুসলিম মিশ্রধারা নিয়ে সেখানে নানান আঙ্গিকে চর্চা হবে। এই সাংস্কৃতিক গবেষণাকেন্দ্রই ভবিষ্যতে অযোধ্যাকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত করবে, এমনই আশা ট্রাস্টের সদস্যদের।