লকডাউনে বাঁকে দুই ছেলেকে বয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরলেন ওডিশার ইটভাটা শ্রমিক রুপায়া টুডু। সাত দিন ধরে মোট ১৬০ কিমি হেঁটে ফিরলেও খাদ্যের অভাবে ধুঁকছে গোটা পরিবার।
ওডিশার ময়ূরভঞ্জের বলডিয়া গ্রাম ছেড়ে যাজপুর জেলার পানিকোইনি গ্রামের এক ইটভাটায় কাজ করতে গিয়েছিলেন জনজাতি গোষ্ঠীর সদস্য রুপায়া। সঙ্গে নিয়েছিলেন স্ত্রী মাতৃকা, ৬ বটিছরের মেয়ে পুষ্পাঞ্জলি এবং ৪ ও আড়াই বছর বয়েসি দুই ছেলেকে।
করোনা সংকে্রমণের জেরে দেশজুড়ে লকডাউন আরোপ করার পরে বন্ধ হয়ে যায় ইটভাটা। বকেয়া বেতন দিতে অস্বীকার করেন ভাটার মালিকও। এই পরিস্থিতিতে গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রুপায়া। অর্থ ও পরিবহণের অভাবে যাজপুর থেকে ১৬০ কিমি পথ হেঁটেই পাড়ি দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।
পরিকল্পনা অনুযায়ী শুরু হয় হাঁটা। কিন্তু অল্প দূর হেঁটেই রুপায়া বুঝতে পারেন, এই সুদীর্ঘ পথ হাঁটতে তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে পারলেও ছেলে দু’টির সে ক্ষমতা কুলোবে না। সমস্যার সমাধানে নতুন কৌশল ভাবেন রুপায়া।
একটি বাঁশের বাঁক তৈরি করে তার থেকে ঝুলিয়ে দেন একজোড়া ঝুড়ি। তাতে দুই ছেলেকে বসিয়ে হাঁটা শুরু করেন শ্রমিক। এই ভাবে ১২০ কিমি পথ হেঁটে শেষ পর্যন্ত গ্রামে ফেরেন টুডু পরিবার।
তবে গ্রামে ফিরেও স্বস্তি পাননি পরিবারের সদস্যরা। সরকারি নিয়ম মেনে তাঁদের ২১ দিন কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আরও ৭ দিন ঘরবন্দি থাকতে হবে। কিন্তু কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে পৌঁছানোর পরে কোনও খাবার ও পানীয় জলের সংস্থান পাননি রুপায়া ও তাঁর পরিবার।
দুই দিন এ ভাবে কাটানোর পরে শনিবার তাঁদের খাবার ও জলের ব্যবস্থা করেন ময়ূরভঞ্জ জেলার বিজেডি সভাপতি দেবাশিস মোহান্তি। খাবার পান সেন্টারে থাকা অন্যান্য শ্রমিক পরিবারের সদস্যরাও।
লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরে ভিনরাজ্য এবং নিজের রাজ্যেরই অন্যান্য জেলা থেকে কেউ ট্রাক বা ভ্যানে চেপে, কেউ সাইকেল চালিয়ে, আবার অনেকে স্রেফ পায়ে হেঁটে নিজেদের গ্রামে ফিরছেন ওডিশার পরিযায়ী শ্রমিকরা। এখনও পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক ফিরে এসেছেন।
ওডিশায় এই মুহূর্তে মোট করোনা আক্রান্ত ৭৩৭ জন। তাঁদের মধ্যে ৬০০ জনই পরিযায়ী শ্রমিক।