বিশ্বজুড়ে মন্দার ভয়। জেট ফুয়েলের দাম আকাশছোঁয়া। তাছাড়া ব্যবসা হিসাবে বিমান পরিবহণের খুব একটা সুখ্যাতি নেই। কিন্তু সেখানেই বিপুল বিনিয়োগ করছেন ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম সেরা বিনিয়োগকারী। রবিবার আকাশার উড়ান শুরু করছেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা।
আকাশা এয়ারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমেই আজ ভারতের ৫২তম ধনী ব্যক্তি তিনি। তাঁকে শেয়ার বাজারের 'বিগ বুল' বলা হয়। অনেকে আবার তাঁর সঙ্গে কিংবদন্তি বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বুফেটের সঙ্গে তুলনা করেন। এ হেন দুঁদে ধনকুবেরের হঠাত্ বিমানচালনার মতো অনিশ্চিত ক্ষেত্রে আগ্রহ হল কীভাবে?
অনেকেই এই প্রশ্ন তুলছে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ বিমানসংস্থাই ধুঁকছে। যেগুলি এখনও ভাল অবস্থায় রয়েছে, তারাও ব্যবসা হিসাবে খুব দারুণ, তা বলা যায় না। বিপুল বিনিয়োগ, ঝুঁকি, নিয়ম-নীতি মানতে হয়। তার বদলে মুনাফা অনেকটাই কম।
ফেব্রুয়ারিতে একটি শিল্প ইভেন্টে এ বিষয়ে মুখ খোলেন রাকেশ। তিনি বলেন, 'অনেকেই জানতে চায় যে, কেন আমি একটি এয়ারলাইন শুরু করেছি। তাদের উত্তর না দিয়ে, এটা বলি যে, আমি ব্যর্থতার জন্য প্রস্তুত।'
'চেষ্টা না করার চেয়ে চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া ভাল,' বলেন ঝুনঝুনওয়ালা। তিনি আরও বলেন, 'সবাইকে যেন ভুল প্রমাণ করতে পারি। এখন বিষয়টা একটা ইগোর ব্যাপার হয়ে গিয়েছে।'
এর আগে বহু ধনকুবেরের স্বপ্নের এয়ারলাইন ডুবেছে। উদাহরণস্বরূপ, বিজয় মাল্যর কিংফিশার এয়ারলাইন। ২০১২ সালে দেউলিয়া হয়ে যায় বিমানসংস্থাটি। যদিও তাঁদের নীতিগত সমস্যা ছিল। ভারতের মতো দেশে, সস্তার উড়ানের বদলে, দামি বিলাসবহুল বিমানযাত্রার প্রচার করেছিল কিংফিশার। ট্রেনে যাতায়াতে অভ্যস্ত ভারতীয়দের মধ্যে তা জনপ্রিয়তা পায়নি।
অন্যদিকে আরও এক উদাহরণ হল সুব্রত রায়ের এয়ার সাহারা। প্রায় ১০ বছর ধরে এই ব্যবসা টেনেছে সাহারা গোষ্ঠী। কিন্তু খালি লোকসানেই ডুবেছে এই এয়ারলাইন। শেষ পর্যন্ত আরেক ধনকুবের নরেশ গয়াল, ২০০৭ সালে এয়ার সাহারা কিনে নেন। নতুন নাম দেন জেট এয়ারওয়েজ।
তবে নামই বদলেছিল। বিমানসংস্থার ব্যবসার ভাগ্য বদলায়নি। লোকসান, দেনায় জর্জরিত হয়ে ২০১৯ সালে রানওয়ে ছেড়ে দেয় জেট।
এ বিষয়ে হুরুন ইন্ডিয়ার প্রধান আনাস রহমান মজা করে বললেন, 'লোকে বলে, মিলিয়নেয়ার হতে চান? তাহলে প্রথমে বিলিয়নেয়ার হন। তারপর একটি বিমান সংস্থা চালু করুন!'
রয়েছে ব্যাতিক্রমও
ভারতে বর্তমানে বিমানে যাতায়াতের প্রবণতা দ্রুত হারে বাড়ছে। বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল বাজার এটি। ফলে, কোথাও যদি বিমানসংস্থা চালু করতেই হয়, সেক্ষেত্রে ভারতের বাজারই আদর্শ। তাছাড়া কোনও কোনও সংস্থা এর মধ্যেই ঠিকই ব্যবসা চালাচ্ছে।
বিশ্বের ধনীতম এয়ারলাইনস বিলিয়নেররা ভারতেরই। ইন্ডিগোর প্রতিষ্ঠাতা রাকেশ গাংওয়াল এবং রাহুল ভাটিয়া। ২০০৬ সালে ইন্ডিগোর উড়ান শুরু হয়। এখনও পর্যন্ত মোটামুটি ভালই এগিয়ে চলেছে সংস্থা।
রাকেশও কি পারবেন?
বাজার বিশেষজ্ঞ অরুণ কেজরিওয়াল বললেন, 'রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা বিনিয়োগকারী হিসাবে দুর্দান্ত। কিন্তু শেয়ার ট্রেডিং করা, আর বিমান পরিবহণের ব্যবসা চালানো এক জিনিস নয়।'
বিশ্লেষকদের মতে, ঝুনঝুনওয়ালা এই ব্যবসা চালানোর জন্য মোটা টাকা গিয়ে অভিজ্ঞ আধিকারিক নিয়োগ করছেন। একটি ভরসাযোগ্য ম্যানেজমেন্ট টিমের উপর বেশিরভাগ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে, সেই টিমের দক্ষতার উপর বর্তমানে আকাশার ভবিষ্যত নির্ভর করছে।