মেয়েদের ক্ষেত্রে কনসেন্ট বা সম্মতির বয়স কমানোর আবেদন জানাল মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট। অর্থাৎ,শারীরিক সম্পর্কে প্রেক্ষিতে মেয়েদের সম্মতির বয়স বর্তমানে ১৮ বছর থেকে কমিয়ে ১৬ করতে হবে, এমনই জানাল মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট। ইতিমধ্যে বিষয়টি কেন্দ্রের কাছে জানিয়েছে উচ্চ আদালত। কিন্তু হঠাৎ কেন এমন আবেদন? শনিবার মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট তাদের বক্তব্যে বলে, ১৮ বছরের আগে অপ্রাপ্তবয়স্ক হিসাবেই তাদের ধরা হয়। চলমান এই ধারণার উল্টো দিকেই অবস্থান নিয়েছে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্ট। বর্তমান সময়ের নিরিখে বয়ঃসন্ধিকাল কিছুটা এগিয়ে এসেছে ছেলেমেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই, তাই সম্মতি বা কনসেন্টের বয়স কমিয়ে ১৬ করার কথা জানান বিচারপতি।
এই কারণেই শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মেয়েদের সম্মতির বয়স ১৮ থেকে কমিয়ে ১৬ করতে আগ্রহী তাঁরা। তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। সমাজ দ্রুত বদলাচ্ছে, বদলাচ্ছে তার সমীকরণ, সম্পর্কের প্রকৃতিও। কিন্তু, পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় এমন সূক্ষ্ম বিষয়গুলি নিয়ে চটজলদি সিদ্ধান্ত না নিয়ে আরও গভীরে পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ, মনে করছেন সমাজের একাংশ।
মধ্যপ্রদেশে ১৬ বছরের এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে ২০ বছরের যুবককে গ্রেফতার করা হয়। অভিযোগ, ছ'মাস টানা তিনি ওই কিশোরীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। এরপর ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে কিশোরীটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে সেই বছরের জুলাই মাসেই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা হয়। পরে পকসো আইনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। তিন বছর ধরে জেল খাটলেও এখনও জামিন পাননি তিনি। এই মামলার প্রসঙ্গেই মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের এমন আর্জি।
শনিবার এই মামলার শুনানিতে মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের বিচারপতি দীপক কুমার আগরওয়াল জানিয়েছেন, ২০১২ সালে আইনের সংশোধন করে শারীরিক সম্পর্কে মেয়েদের সম্মতির বয়স ১৬ থেকে বাড়িয়ে ১৮ করা হয়েছিল। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, সোশ্যাল মিডিয়া এবং অন্য প্রযুক্তি ও সামগ্রিক সামাজিক পরিসরে বর্তমানে ছেলেমেয়েরা আগের থেকে দ্রুত বয়ঃসন্ধিতে পা দেয়। তাঁদের মানসিক বিকাশ আগের চেয়ে আরও অনেক দ্রুত হয়। বিচারপতির আরও পর্যবেক্ষণ মেয়েরা ১৪ বছরের কাছাকাছি বয়সে পা দিলেই বয়ঃসন্ধি প্রত্যক্ষ করে। এরফলে তারা জৈবিক কারণেই সমবয়সি ছেলেদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এই ফলে বহুক্ষেত্রেই উভয়ের সম্মতিতেই শারীরিক সম্পর্কও গড়ে উঠলে আইনের চোখে ১৮ বছরের আগে কোনও মেয়েই প্রাপ্তবয়স্ক নয়। তাই, অনেক ক্ষেত্রেই ছেলেদের প্রতি অবিচার হয় বলে মত হাইকোর্টের।
এই আর্জির পক্ষে যেমন যুক্তি দিয়েছেন বিচারপতি, তেমনই বিপক্ষেও আছে মতামত। বর্তমানে সমাজ-সভ্যতার বদলের সাথে সাথে মেয়েরা বয়ঃসন্ধি কিছুটা আগে প্রত্যক্ষ করলেও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, বিপদাপন্ন পরিস্থিতিতে নিজেকে রক্ষা করার ক্ষমতা অধিকাংশ মেয়ের ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না ১৬ বছর বয়সে। পিতৃতান্ত্রিক সমাজ কাঠামোয় দেখা যায় ১২ থেকে ১৮ বছরের মেয়েদের ওপরই যৌননির্যাতন, ধর্ষনের মত ঘটনা বেশি ঘটে। লিঙ্গবৈষম্য যে সমাজে প্রকট, সেখানে কনসেন্ট বা, সম্মতি আদায়ের ক্ষেত্রেও বহু সময় ‘ম্যানিপুলেশন’ করা হয়। আর কৈশোরকালে নিজেদের জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অনেকেরই থাকেনা। ফলে, মধ্যপ্রদেশ হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ বা, আবেদন নতুন এক প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল। এই মীমাংসা কোন পথে হয়, অপেক্ষা করতেওই হবে।