লাঘব তো হচ্ছেই না, উলটে দিনদিন বাড়ছে আর্থিক বোঝার ভার। তাই ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানালেন রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বিনোদকুমার যাদব। পাশাপাশি, পেনশন খাতে রেলের খরচ ছুঁয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। আর্থিক বোঝা কমাতে পেনশন খাতের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রককে আর্জি জানানোর বিষয়েও আলোচনা চলছে।
রেলে প্রায় ১৩ লাখ কর্মী কাজ করেন। সঙ্গে ১৪ লাখ পেনশনভোগী রয়েছেন। ফলে পেনশন খাতে আয়ের একটা বড় অংশ বেরিয়ে যাচ্ছে রেলের। ক্রমশ আর্থিক ভারে জর্জরিত হয়ে পড়ছে মন্ত্রক। রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, 'আমরাই একমাত্র মন্ত্রক যারা নিজের আয় দিয়ে খরচ মেটাই। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক-সহ অন্য সব মন্ত্রকের খরচ বহন করে কেন্দ্র। বর্তমানে আমাদের কর্মীসংখ্যা পেনশনভোগীর থেকেও বেশি। যা আমাদের কাছে বড়সড় বোঝা। আমাদের বার্ষিক আয় প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। পেনশন দিতেই আয়ের ২৫ শতাংশ বেরিয়ে যাচ্ছে।'
তবে এবারই প্রথম নয়, প্রাক্তন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর আমলেও অর্থ মন্ত্রককে পেনশন খাতের খরচ বহনের আর্জি জানানো হয়েছিল। কিন্তু রেল নিজেই মুনাফা অর্জন করে - এই যুক্তিতে সেই আর্জি খারিজ করে দেয় নর্থ ব্লক।
আর্থিক ফাঁস লাঘব করতে যাত্রীভাড়া ও পণ্য মাশুল বাড়ানোরও চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানান বিনোদকুমার। তিনি বলেন, 'ভাড়া পুনর্বিবেচনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। দুটি ভাড়াই (যাত্রীভাড়া ও পণ্য মাশুল) উপযুক্ত করতে হবে। পণ্য মাশুল কিছুটা বেশি। আমাদের লজিস্টিক খরচ কমাতে হবে ও সড়ক ক্ষেত্র থেকে (ব্যবসা) টানতে হবে।'
রেল মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, রাস্তা দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য নিয়ে যাওয়া হয়, তার মাত্র ৩৫ শতাংশের ক্ষেত্রে রেলপথ ব্যবহার করা হয়। তার জেরে পণ্য পরিবহনেও ক্ষতির মুখে পড়ছে রেল। অন্যদিকে, প্রতিদিন ২২ হাজার ট্রেন চালায় রেল। এরমধ্যে ১২ হাজার যাত্রীবাহী ট্রেন। নিয়মিত প্রায় ২৩ লাখ মানুষ ট্রেনে যাতাযাত করেন। তা সত্ত্বেও যাত্রী পরিবহনেও লাভের মুখ দেখছে না রেল। গত ৩ ডিসেম্বর ক্যাগের রিপোর্টে রেলের আয়ের সেই বেহাল ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, গত এক দশকে রেলের অপারেটিং রেশিয়ো (১০০ টাকা আয করতে কত টাকা খরচ হয়) সবচেয়ে খারাপ ২০১৮ সালে।
রেলওয়ে বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, 'আমাদের আর্থিক সমস্যা রয়েছে। যদি আমাদের পেনশন খাতের খরচ অর্থ মন্ত্রক বহন করে তাহলে আমাদের পরিষেবা উন্নত হবে। এই অবস্থা থেকে কিছুটা বেরোনোর জন্য কয়েকটি সংস্কারও করা হয়েছে। এখন মূল বিষয় হল যে, আমাদের ৬৮ হাজার কিলোমিটার ব্রডগেজ লাইনের মধ্যে ৩৪ হাজার কিলোমিটার লাইনে চাপ পড়ছে ৯৬ শতাংশ।'
রেলের এই চিন্তাভাবনায় কোনও অযৌক্তকতা দেখছেন না রেলওয়ে বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান এস এস খুরানা। তিনি বলেন, 'পেনশন খাতের খরচ বহনের জন্য অর্থ মন্ত্রককে আর্জি জানানোর বিষয়টি যুক্তিযুক্ত। কারণ অন্যান্য মন্ত্রকের মতোই যদি আপনি রেলকে ভাবেন তাহলে ভালো হয়। সাধারণ বাজেটের সঙ্গে রেল বাজেট মিলিয়ে দেওয়ায় রেলের আয়ের একটা বড় অংশ সরকারের ঘরে ঢুকছে। তাই তারা পেনশন খাতের খরচও বহব করতে পারবে। এর ফলে রেলের অপারেটিং রেশিয়োও ভালো হবে।'