লোকসভা ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। তাই নরেন্দ্র মোদী স্ট্র্যাটেজি কী হয়, সেদিকে নজর ছিল বাজারের। সেই বাজেটে জনমোহিনী পথে হাঁটলেও পরিকাঠামো, প্রযুক্তি, পর্যটনের মতো ক্ষেত্রেও জোর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সেই পরিস্থিতিতে একাধিক ক্ষেত্র মালামাল হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। আবার কোনও কোনও সংস্থার উপর শঙ্কার কালো মেঘ তৈরি হয়েছে।
কারা কারা লাভবান হল?
কৃষি
আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে কৃষিক্ষেত্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন সীতারামন। হর্টিকালচার, মৎস্যচাষের মতো ক্ষেত্রেও বাড়তি ‘বুস্টার’ দেওয়া হয়েছে। সেইসব ঘোষণার ফলে কাবেরী সিড কোম্পানি, ধানুকা এগ্রিটেক লিমিটেড, বম্বে সুপার হাইব্রিড সিডস, রাষ্ট্রীয় কেমিক্যালসের মতো সংস্থার মুখে হাসি ফুটবে।
পর্যটন
এবার বাজেটে পর্যটনের উপর বড়সড় জোর দিয়েছেন সীতারামন। ঘরোয়া পর্যটনের উপর জোর দিতে ৫০ টি জায়গাকে চিহ্নিত করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে ভারতীয় রেলের তরফেও পর্যটনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় রেল, থমাস কুক ইন্ডিয়া লিমিটেড, ইন্ডিয়ান হোটেলসের মতো সংস্থা লাভবান হবে।
পরিকাঠামো
দ্বিতীয় মোদী সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেটে পরিকাঠামোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় সারির শহরে বিমানবন্দর গড়ে তোলা হবে। ভারতীয় রেলকে রেকর্ড ২.৪ লাখ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। সেইসব ঘোষণার ফলে আদানি এয়ারপোর্ট হোল্ডিংস লিমিটেড, জিএমআর এয়ারপোর্টস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড, জিভিকে এয়ারপোর্ট ডেভেলপারস মিলিটেড, লারসেন অ্যান্ড টারবো, ভারত হেবি ইলেকট্রিকালস লিমিটেডের মতো সংস্থার লক্ষ্মীলাভ হতে পারে।
করদাতা
মধ্যবিত্তের প্রত্যাশাপূরণ করে এবারের বাজেটে কর কাঠামোর পরিবর্তন করেছেন সীতারামন। বাজেটে করছাড়ের সীমা বাড়িয়ে সাত লাখ টাকা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে ধনীদের স্বস্তি দিয়েছেন সীতারামন। সর্বোচ্চ করের হার কমিয়ে ৩৯ শতাংশ করা হয়েছে। তার জেরে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত মানুষ লাভবান হবেন।
ধাতু/সিমেন্ট
এবারের বাজেটে আবাসন, পরিকাঠামো, রেলের মতো ক্ষেত্রে বড় ঘোষণা করা হয়েছে। তাতে বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত হয়েছে। যা ধাতু ও সিমেন্ট প্রস্তুতকারকের মতো সংস্থার জন্য লাভজনক হতে চলেছে। যে তালিকায় আছে টাটা স্টিল লিমিটেড, জেএসডব্লুউ স্টিল লিমিটেজ, জিন্দল স্টিল অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেডের মতো সংস্থা।
বৈদ্যুতিক গাড়ি
দূষণ রুখতে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি জনপ্রিয় করার জন্য পদক্ষেপ করেছেন সীতারামন। বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির জন্য যে লিথিয়াম-আয়ন সেল ব্যবহৃত হয়, তাতে অভিবাসন শুল্ক কমানো হয়েছে। সেই পদক্ষেপের ফলে যেমন এক্সাইড ইন্ডাস্ট্রিজ এবং অমর রাজা ব্যাটারি লিমিটেডের মতো ব্যাটারি প্রস্তুতকারকরা লাভবান হবে; তেমনই টাটা মোটর্স লিমিটেড ও মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা লিমিটেডের মতো গাড়ি প্রস্তুতকারকরা লাভবান হবে।
কারা কারা ধাক্কা খেল?
প্রতিরক্ষা
গতবারের থেকে এবার বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ বেড়েছে সাত শতাংশ। তবে সংবাদসংস্থা ব্লুমবার্গে কেপিএমজির এরোস্পেস এবং ডিফেন্সের পার্টনার এবং প্রধান গৌরব মেহনদিরাট্টার বক্তব্য, প্রতিরক্ষা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাড়তি কোনও অক্সিজেন মেলেনি।
সিগারেট প্রস্তুতকারক
এবারের বাজেটে কয়েকটি সিগারেটে প্রায় ১৬ শতাংশ কর বাড়ানো হয়েছে। তারপর পতন হয়েছে গোল্ডফ্রে ফিলিপস ইন্ডিয়ার শেয়ারের। অর্থাৎ ধাক্কা খেয়েছে সিগারেট প্রস্তুতকারক সংস্থা।
গয়না প্রস্তুতকারক
বাজেটে আমদানি শুল্ক কমানোর আশায় ছিলেন অনেকে। কিন্তু তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বরং সোনা এবং রুপোর বার থেকে তৈরি জিনিসপত্রের আমদানি শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সীতারামন। তারপর শেয়ার বাজারে উত্থান হয় সোনা এবং রুপোর দাম।
এমনিতেই সম্প্রতি সোনার দাম চড়চড়িয়ে দাম বাড়ছিল। তারইমধ্যে বাজেটে কোনও সুরাহা না পাওয়ায় সোনা এবং রুপোর দাম আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা। ওই মহলের ধারণা, যত দাম বাড়বে, তত বাজারে চাহিদা আরও কমবে। কমবে বিক্রি।
তৈল শোধনাগার
তুমুল প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়ান কর্পোরেশন এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জন্য কোনও ছাড়ের ঘোষণা করেননি সীতারামন। ডিজেল ও গ্যাসোলিনের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে যে ‘ক্ষতির’ বোঝা বইতে হচ্ছে, তা থেকে রেহাই দিতে বাজেটে কোনও সাহায্যের ঘোষণা করার দাবি করছিল একাধিক সংস্থা।
বিদেশ গাড়ি প্রস্তুতকারক
বৈদ্যুতিক গাড়ি-সহ বিদেশি গাড়ির দাম বাড়তে চলেছে। কারণ দেশে গাড়ি তৈরির উপর জোর দিতে বিদেশ থেকে আনা গাড়িতে বাড়তি কর চাপানো হয়েছে। তার জেরে মার্সিডিজ বেনজের মতো সংস্থাকে বড় সমস্যার মুখে পড়তে হবে।
(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)