আজ অর্থাৎ ১২ জানুয়ারি দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে জাতীয় যুব দিবস অর্থাৎ, স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন। আজকের ভারতেও কেন প্রাসঙ্গিক বিবেকানন্দ? সে সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে আমাদের ফিরতে হয় বিবেকানন্দের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে ভাবনায়। শিশু কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষা ব্যবস্থা কেমন হবে কিংবা নারী শিক্ষার অগ্রগতি ঘটবে কিভাবে, এসকল বিষয়ে সচেতন ছিলেন বিবেকানন্দ। জাতীয় শিক্ষা প্রসঙ্গে বিবেকানন্দ বলেছিলেন, ‘ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ এবং কর্মশক্তিকে শুধুমাত্র অধ্যয়ন ও আত্মােন্নতির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখলে চলবে না, বরং প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে সমাজসেবার মহান উদ্দেশ্যে উদ্বুদ্ধ ও নিয়ােজিত করতে হবে।’ বিবেকানন্দের মতে এই জাতীয় সেবা ধর্ম ভারতীয়দের মধ্যে এক জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করবে।
জাতীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন বিবেকানন্দ।
১) আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ: শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতিটি ব্যক্তির আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে।
২) আত্মচেতনার বিকাশ: এক্ষেত্রে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে আত্মচেতনার মধ্য দিয়ে শিক্ষালাভ করাতে হবে।
৩) গণশিক্ষার উপর গুরুত্ব প্রদান: গণশিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন স্বামীজি। শিক্ষার কার্যক্রমকে একদিকে যেমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক করে গড়ে তুলতে হবে, তেমনই অন্যদিকে তা যাতে সমাজের চাহিদাপূরণ করতে পারে, সে বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।
৪) নৈতিক চেতনার বিকাশ: ধর্মীয় শিক্ষার মধ্য দিয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে নৈতিক চেতনার বিকাশ ঘটানোর দিকে জোর দিতে বলতেন স্বামীজি।
৫) দেশাত্মবােধের বিকাশ: প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীকে দেশাত্মবােধে উদ্বুদ্ধ করলে তবেই সমাজ তথা দেশের প্রগতি হবে বলে মনে করতেন স্বামী বিবেকানন্দ।
৬) সহানুভূতিশীলতার বিকাশ: শিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের সহানুভূতিশীল করে তুলতে হবে।
৭) স্বনির্ভরতা গঠন: প্রত্যেক শিক্ষার্থী যাতে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
৮) সক্রিয়তার নীতি অনুসরণ: শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সক্রিয়তার নীতি অনুসরণের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯) দেশীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ: দেশের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পরিচিত হওয়ার সুযােগ করে দিতে হবে।
১০) কর্ম অভিজ্ঞতা অর্জন: কর্ম অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য উপযুক্ত শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।
বিবেকানন্দ স্ত্রীশিক্ষার ওপর বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। স্বামীজি বলতেন, ‘পুরুষ যদি ব্রহ্মজ্ঞ হতে পারে, তাহলে মেয়েরা হতে পারবে না কেন?’ তাই তিনি মেয়েদের জন্য গ্রামে গ্রামে পাঠশালা খুলে তাদের মানুষ করতে বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, মেয়েরা মানুষ হলে তবেই তাদের সন্তানসন্ততি দ্বারা দেশের মুখ উজ্জ্বল হবে। স্বামীজির ভাবনায় নারীদের আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশের জন্য মঠ গড়ে তুলতে হবে এবং মঠের সঙ্গে থাকবে নারীশিক্ষার জন্য বিশেষ বিদ্যালয়।