বাংলা নিউজ >
ছবিঘর > অপুর সংসার থেকে বরুণ বাবুর বন্ধু, সৌমিত্রর ৬ দশক দীর্ঘ কেরিয়ারের এক ডজন গপ্পো
অপুর সংসার থেকে বরুণ বাবুর বন্ধু, সৌমিত্রর ৬ দশক দীর্ঘ কেরিয়ারের এক ডজন গপ্পো Updated: 15 Nov 2020, 12:40 PM IST Priyanka Mukherjee সৌমিত্র মানেই বাংলা ছবির বেলাশেষ নয় বেলাশুরু। ছয় দশক ব্যপ্ত তাঁর ফিল্মি কেরিয়ার। বাংলা চলচ্চিত্রকে তিনি পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বের দরবারে। রোম্যান্টিক হিরো থেকে ভিলেন কিংবা ট্র্যাজিক নায়ক হয়ে উঠা- সব চরিত্রেই সিদ্ধহস্ত সৌমিত্র। বাঙালির প্রাণের অপু, পছন্দের ফেলুদা, আদরের খিদ্দা-সব ভূমিকাতেই তিনি অনন্য। 1/12 অপুর সংসার (১৯৫৯)- এই ছবির সঙ্গেই সৌমিত্রর পথচলা শুরু। সত্যজিত্ রায়ের জহুরির চোখ ভুল করেনি অপুকে খুঁজে নিতে। বিভূতিভূষণের কল্পনার অপুর চরিত্রে প্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন সৌমিত্র। অপুর জীবনের টানাপোড়েনের আখ্যান জীবন্ত হয়ে উঠেছিল সৌমিত্রর ম্যাজিক্যাল পারফরম্যান্সে। 2/12 ক্ষুধিত পাষাণ (১৯৬০)- অভিনেতার কেরিয়ারের তৃতীয় ছবি। প্রথমবার সত্যজিতের ছত্রছায়ার বাইরে গিয়ে কাজ। তবে তপন সিনহার পরিচালনাতেও সেরাটা উজার করে দিয়েছেন সৌমিত্র। রবি ঠাকুরের ছোট গল্প ক্ষুধিত পাষাণ অলম্বনে তৈরি এই ছবি। 3/12 ঝিন্দের বন্দি (১৯৬১)- একজন মৃদুভাষী রোম্যান্টিক হিরোর পক্ষে কী এক লহমায় ভিলেন হয়ে উঠা সম্ভবপর? তাঁর নাম যদি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হয়- তাহলে তো একশো শতাংশ সম্ভবপর। এই ছবিতে বাঙালির মহানায়ক উত্তম কুমারকে টক্কর দিয়েছিলেন সৌমিত্র।শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত পরিচালক তপন সিনহা এই ছবিতে লম্পট, সুদর্শন সৌমিত্র চোখ টেনেছেন পুরোমাত্রায়। 4/12 অভিযান (১৯৬২) : মানুষের অহংবোধ কতখানি মারাত্মক হতে পারে তাই সত্যজিত রায়ের অভিযানের উপজীব্য। তবে অংহবোধকে ছাপিয়ে মানবতাই যে শ্রেষ্ঠ তাও এই ছবিতে তুলে ধরেছেন পরিচালক। পুরোদস্তুর সিরিয়াস ছবি এটি। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হয়েছে এই ছবি। 5/12 চারুলতা (১৯৬৪)- এই ছবি নিয়ে যত কথাই বলা হোক না কেন তবুও যেন কত কথা বাকি রয়ে যায়। আবারও রবীন্দ্রনাথ সৃষ্ট চরিত্রে নিজেকে মেলে ধরেছেন সৌমিত্র। পরিচালক সত্যজিত্ রায় ও সৌমিত্র জুটির অন্যতম সেরা ছবি চারুলতা। মূলত নারীকেন্দ্রিক এই ছবি কিন্তু অসম্পূর্ন অমল ছাড়া, সৌমিত্র ছাড়া। 6/12 তিন ভুবনের পারে (১৯৬৯)-- হয়ত তোমারই জন্য, জীবনে কি পাবো না… এই গান তো আজকের প্রজন্মের বাঙালিও গুনগুন করে। এতটাই ম্যাজিক্যাল সৌমিত্রর এই ছবি। লোফার থেকে আদর্শ প্রেমিক হয়ে উঠার জার্নি নিজের ক্যারিশ্মায় পরিচালক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের এই ছবিতে ফুটিয়ে তুলেছেন সৌমিত্র। 7/12 অরণ্যের দিন রাত্রি (১৯৭০) : সত্যজিতের এই ছবিতে একদম ভিন্ন অবতারে ধরা দিয়েছেন সৌমিত্র।উচ্চাভিলাষী টগবগে যুবক, বড় কোম্পানির এক্সিকিউটিভ অসীমের ভূমিকাটি বোধহয় সৌমিত্র ছাড়া আর কেউই ফুটিয়ে তুলতে পারতেনন না। কীভাবে যে আপনি অসীমের প্রেমে পড়ে যাবেন এই ছবি দেখলে তা সত্যি কল্পনাতীত। 8/12 ফেলুদা সিরিজ-: বাঙালির কাছে ফেলুদা আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় দুটো সমার্থক শব্দ। স্রষ্টা সত্যজিতের ফেলুদা চরিত্র প্রাণ ঢেলেছেন অভিনেতা। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কেরিয়ারগ্রাফের অন্যতম বড়ো প্রাপ্তি সোনার কেল্লা (১৯৭৪) ও জয় বাবা ফেলুনাথ (১৯৭৯) । আজ পর্যন্ত বাঙালি সৌমিত্র ব্যতীত অন্য কাউকেই ফেলুদা হিসাবে ১০০-তে ১০০ দিতে পারেনি। 9/12 গণশত্রু (১৯৮৯)- সত্যজিত রায়ের কেরিয়ারের একদম শেষের দিকে ছবি। নরওয়ের লেখক হেনরিক ইবসেনের অ্যান এনিমি অফ দ্য পিপল অবলম্বনে তৈরি হয়েছিল এই ছবি। এই চলচ্চিত্রে প্রগতিশীল ডাক্তারের ভূমিকায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে পেয়েছে দর্শক। কান চলচ্চিত্র উত্সবে প্রতিযোগিতামূলক বিভাগে জায়গা করে নিয়েছিল গণশত্রু। 10/12 কোনি (১৯৮৬)- ‘কোনি’ ছবির সেই বিখ্যাত সংলাপ– ‘ফাইট কোনি ফাইট’, বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসের অন্যতম জনপ্রিয় সংলাপ বলা চলে এটিকে। সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে কীভাবে এগিয়ে চলতে হয় তা পরিচালক সরোজ দে-র এই ছবিতে আপামর বাঙালিকে শিখিয়েছেন খিদ্দা। 11/12 পদক্ষেপ ( ২০০৬)- কোনও পুরস্কারই সৌমিত্রর অভিনয় দক্ষতার সঠিক মাপকাঠি হতে পারে না। তবুও পরিচালক সুমন ঘোষের এই ছবির জন্যই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মঞ্চে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন সৌমিত্র। অশীতিপর বৃদ্ধ কীভাবে দ্রুত গতিতে পরিবর্তনশীল জীবনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন সেই নিয়েই এই ছবি। বহুল জনপ্রিয় না হলেও সৌমিত্রর কেরিয়ারের অন্যতম বহুল প্রশংসিত ছবি পদক্ষেপ। 12/12 বেলাশেষে (২০১৫) : আশিতে এসেও কোনও ছবির হিরো হওয়া যায়। তা বেলাশেষে ছবিতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সৌমিত্র। শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটির পরিচালনায় এই ছবির অন্যতম ইউএসিপি ছিল তিন দশক পর সৌমিত্র-স্বাতীলেখার রিইউনিয়ান। পাক-ধরা চুলের প্রেমও যে এতটা চোখ টানতে পারে তা বোধহয় আগে বুঝে উঠেনি বাঙালি। ম্যারেজ কাউন্সিং কোর্সের অব্যর্থ দাওয়াই এই ছবি।