কয়েক বছর যাবৎ ডার্বিতে টানা হার নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা হত, তাচ্ছিল্য করা হত ইস্টবেঙ্গলকে। কিন্তু পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। চলতি মরশুমে তিন ডার্বির মধ্যে জোড়া জয় লাল-হলুদের। আর এই পরিবর্তন যাঁর হাত ধরে, শুক্রবার সেই কার্লেস কুয়াদ্রাতকে নিয়ে উচ্ছ্বাসে ভাসল ইস্টবেঙ্গল। সমর্থকদের কাঁধে চেপেই স্টেডিয়াম থেকে টিম বাস পর্যন্ত গেলেন লাল-হলুদের স্প্যানিশ কোচ।
৩-১ যুদ্ধ জয়ের পর তৃপ্ত কুয়াদ্রাত বলে গেলেন, ‘আমরা একটা আলাদা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম। সময়টা খারাপ যাচ্ছিল। সেখানে ডার্বি জেতা খুবই জরুরি ছিল। ডুরান্ড ডার্বির আগে শুনেছিলাম মোহনবাগান আমাদের ৫-০ গোলে হারাবে। তাই সেই ডার্বি জয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই জয়ের গুরুত্বও অপরিসীম। সবাই আমাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করত। কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই ধরত না। ভাবতেই পারত না আমরাও ডার্বি জিততে পারি। আমাদের নিয়ে প্রচুর মন্তব্য করা হত। প্রতিপক্ষ আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করত। এবার আশা করি সেই ধারণা বদলাবে। এই জয়টা সমর্থকদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধারা বদলের অঙ্গ হতে পেরে ভালো লাগছে।’
কত গোলে জেতা উচিত ছিল, সেই প্রসঙ্গে স্প্যানিশ কোচ বলেছেন, ‘মোহনবাগানও কিন্তু গোল করতে পারত। একটা পেনাল্টি নষ্ট করেছে ওরা। শেষ দিকে একটা ফ্রিকিক পেয়ে কাজে লাগাতে পারেনি। তবে আমার ছেলেদের স্পষ্ট একটা কথা বলে দিয়েছিলাম, মোহনবাগান খুব ভালো দল। অনেক ভালো ফুটবলার রয়েছে। আমাদের গা-ছাড়া মনোভাব দিলে একেবারেই চলবে না। বিরতিতেও ছেলেদের বলেছি, একটা গোলের তফাত যথেষ্ট নয়।’
শুরুতে এক গোলে পিছিয়ে পড়ে ৩-১ এ ডার্বি জয়। সচরাচর হয় না। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট কোনটা? কুয়াদ্রাত বলেন, ‘আমরা ক্রমাগত সুযোগ তৈরি করছিলাম। সেট পিসে প্রথমে মোহনবাগান গোল করে। কিন্তু আমরা হাল ছাড়িনি। আক্রমণ বাড়াই। জানতাম এক গোলের মার্জিন কিছুই নয়। ছেলেদের আক্রমণ চালিয়ে যেতে বলি। প্রথমার্ধেই সমতা ফেরানোর লক্ষ্য ছিল। আমরা প্রচুর সুযোগ তৈরি করেছি। ওরা পেনাল্টি, ফ্রিকিক মিস করেছে। মোহনবাগান শক্তিশালী দল। তবে জানতাম ক্রমাগত আক্রমণ করে যেতে পারলে গোল আসবেই। এটাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’
এদিনে ক্লেটনের জোড়া গোলই বদলে দিয়েছে ম্যাচের রং। সঙ্গে বাকি ফুটবলারদের লড়াই তো ছিলই। ফুটবলারদের তাগিদে নিয়েও উচ্ছ্বাস প্রকাশ দেখা গেল কুয়াদ্রাত। তিনি বলেন, ‘ক্লেটন আদর্শ ক্যাপ্টেন। স্মার্ট, বুদ্ধিসম্পন্ন স্ট্রাইকার। ক্রমাগত গোলের চেষ্টা করে। বক্সের মধ্যে সুযোগের সন্ধানে থাকে। আগের ম্যাচে গোল না পেলেও বারবার উঠে এসে বিপক্ষকে বিপদে ফেলছিল। ও এমন একজন প্লেয়ার যে, যে কোনও মুহূর্তে ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে। ওর পারফরম্যান্স আমি ভীষণই খুশি। বোরহাও নিজের সেরা ম্যাচ খেলেছে। আমরা জানতাম কোথায় ফাঁকা জায়গা আছে, সেটাই কাজে লাগিয়েছি।’
ডুরান্ডের গ্রুপ পর্বে জয়ের পর ফাইনালে হারতে হয়েছিল। এদিনের ডার্বি জয়কে তার বদলা হিসেবে দেখছেন না কুয়াদ্রাত। ডার্বি জেতা হয়ে গিয়েছে। এবার একটাই লক্ষ্য ট্রফি জয়। সেই গন্ধ কি এখন থেকেই পাচ্ছেন লাল-হলুদের কোচ? কুয়াদ্রাত বলেন, ‘একেবারেই না। আমরা এখনও অনেক দূরে আছি। দু'টো ৯০ মিনিট পার করতে হবে। এই মুহূর্তে ট্রফির গন্ধ পাওয়ার মতো জায়গায় আমরা যাইনি। আপাতত একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার প্রস্তুতি শুরু হবে।’
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।