শুভব্রত মুখার্জি: ফরাসি ফুটবল তথা বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা জিনেদিন জিদান। ১৯৯৮ সালে তাঁর হাত ধরেই নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ ট্রফি জিতেছিল ফ্রান্স। পাশাপাশি ক্লাব ফুটবলেও জুভেন্টাস, রিয়াল মাদ্রিদের মতন বড় বড় ক্লাবের হয়ে রয়েছে তাঁর একাধিক সাফল্য। সেই জিদানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অথবা ক্লাব পর্যায়ে একসঙ্গে ফুটবল খেলতে পারাটা অত্যন্ত সৌভাগ্যের। যে কোনও ফুটবলার বিশেষ করে নবীন ফুটবলারের কাছে তা অত্যন্ত বড় পাওনা। একদা ভারতীয় বংশোদ্ভুত ফুটবলার বিকাশ ধোরাসু একসঙ্গে খেলেছিলেন জিদানের সঙ্গে। খেলেছিলেন শুধু নয় ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল, ২০০৫ সালের উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালেও তিনি জিদানের সতীর্থ হিসেবে ছিলেন। সেই বিকাশ ধোরাসুর মতে ফুটবল মাঠে জিনেদিন জিদানের পরিবর্ত হয়ে মাঠে নামাটাও অনবদ্য একটা মুহূর্ত।
বিকাশ ধোরাসুর দুর্ভাগ্য হল ২০০৬ ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনাল অথবা ২০০৫ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তিনি দলে থাকলেও মাঠে নামার সুযোগ পাননি। গোটা ম্যাচটা তাঁকে কাটাতে হয়েছে পরিবর্ত বেঞ্চে বসেই। কোচ তাঁকে এই দুই ম্যাচেই মাঠে নেমে পারফরম্যান্স করার কোনও সুযোগ দেননি। যা নিয়ে কিছুটা হলেও আক্ষেপ রয়েছে তাঁর। টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিকাশ জানিয়েছেন, 'আমি খেললে হয়ত দুটো ফাইনালের ভাগ্য অন্যরকম হত (হাসি)। আমরা হয়ত ম্যাচটা জিতে যেতাম। আমরা সবাই জানি ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে কী হয়েছিল (ইতালির কাছে পেনাল্টি শুট আউটে হারতে হয়েছিল ফ্রান্সকে)। এসি মিলানের হয়ে খেলার সময়েও (২০০৫ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল হয়েছিল এসি মিলান এবং লিভারপুলের) আমার মাঠে নেমে খেলার সুযোগ পাওয়া উচিত ছিল। তবে স্টিভেন জেরার্ডের গোল ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে দিয়েছিল। মিলানের টিমটা তখন খুব ভালো ছিল। কাকা, আন্দ্রেই শেভচেঙ্কোর মতন ফুটবলাররা ছিল। যারা নিঃসন্দেহে আমার থেকে অনেক ভালো।'
প্রসঙ্গত দুটি ফাইনালেই বিকাশ ধোরাসুরা হেরেছিলেন পেনাল্টি শুট আউটে। এরপরেও পিএসজি এবং লিঁয়তে খেলা প্রাক্তন মিডফিল্ডার মনে করেন জীবন তাঁর প্রতি সত্যিই দয়াশীল! তিনি জানিয়েছেন 'আমার ঠাকুরদা ভারতে ছিলেন। তিনি পরবর্তীতে মরিশাসে চলে আসেন। ২০০৬ বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল এবং ২০০৫ উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে দুটোতেই আমি খেলেছিলাম। এটা অসাধারণ একটা জিনিস। আমাকে খুশি হতেই হবে এটা নিয়ে। আমি এটা ভেবে দুঃখিত হতে পারি না যে দুটো ফাইনালে আমি মাঠে নেমে খেলার সুযোগ পাইনি।'
২০০৬ সালের বিশ্বকাপ ফ্রেন্ডলি ম্যাচে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ফ্রান্সের হয়ে জিনেদিন জিদানের বদলি হিসেবে মাঠে খেলতে নেমেছিলেন তিনি। তবে জিদান উঠে যাওয়ায় সেই সময় দর্শকদের ভালোবাসা পাওয়ার বদলে তাঁকে কটাক্ষও শুনতে হয়। সেই বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন 'ওই মেক্সিকো ম্যাচটা আমার মনে আছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার জিনেদিন জিদান। তাই ওর সঙ্গে খেলা বা ওর বিপক্ষে খেলা দুটোই সম্মানের। আমরা এক বয়সি। ফ্রান্সের হয়ে একসঙ্গে অনেক ম্যাচে খেলেছি। ওর পরিবর্তে হিসেবে মাঠে নামাটা আমার কেরিয়ারের অন্যতম সেরা মুহূর্ত।'