প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো আন্দোলনে ইতি। বিজয়ী রাম মন্দির।অযোধ্যায় নবনির্মিত এই মন্দিরে আজ রাম লালা মূর্তির' প্রাণ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগছে যে এই প্রাণ প্রতিষ্ঠা শব্দের অর্থ কী? সবটাই জানব আজই।
বলা হচ্ছে, রাম মন্দিরে 'প্রাণ প্রতিষ্টা' অনুষ্ঠান, রাম লালার মূর্তির পবিত্রতাকে চিহ্নিত করবে। ভগবান রামের যুবা অবতার বিভিন্ন সামাজিক ক্ষেত্রের শুভ ফল আনবে। দেশব্যাপী বিশিষ্ট আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতিনিধি, বিভিন্ন উপজাতি উপদলের প্রতিনিধি এবং আরও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব সাক্ষী রয়েছেন এই অনুষ্ঠানে। নেতৃত্বে ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
প্রাণ প্রতিষ্টা, আপাতদৃষ্টিতে যার অর্থ হল একটি মূর্তিতে প্রাণ সঞ্চার করা। এই কাজে সফলতা পেতে বেদ এবং পুরাণ থেকে প্রাপ্ত জটিল আচার-অনুষ্ঠান ধাপে ধাপে অনুসরণ করতে হয়। সেই প্রতিটি ধাপ আজ আমরা আলোচনা করলাম।
- শোভা যাত্রা
প্রাণ প্রতিষ্ঠার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাথমিক পর্যায় হল শোভা যাত্রা। এই যাত্রায় মন্দিরের আশেপাশে প্রদক্ষিণ করানো হয় মূর্তিকে। মন্দির অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে, সে স্থানের ঐশ্বরিক শক্তি জেগে ওঠে। প্রদক্ষিণকারীর মনের ভক্তি মূর্তির প্রাণ সঞ্চারের সূচনা করে। এরপর মণ্ডপে প্রতিমা প্রত্যাবর্তনের পর শুরু হয় প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান।
- আধিবাস ও স্নান
প্রাণ প্রতিষ্ঠার আগে, মূর্তিটি একাধিক আধিবাসের মধ্য দিয়ে যায়।
অধিবাসের পরে, ওই দেব মূর্তিকে স্নান করানো হয়। এর পর আসে অভিষেকের পালা। এই রীতিতে '১০৮টি বিভিন্ন ধরনের উপকরণ, যেমন পঞ্চামৃত, বিভিন্ন সুগন্ধি ফুল ও পাতার নির্যাসযুক্ত জল, গরুর শিংয়ে ঢেলে দেওয়া জল এবং আখের রস অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।'
- চক্ষু দান
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও চূড়ান্ত ধাপ হল অনুষ্ঠান হল দেবতার চক্ষু দান। দেবতার চোখের চারপাশে অঞ্জন দিয়ে একটি সোনার সুই ব্যবহার করা হয়। এই সুই দেবতার প্রথম দৃষ্টির প্রখরতাকে নিয়ন্ত্রণে আনে, বলে মনে করা হয়।
যে ধাপে ধাপে রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে
১৬ জানুয়ারী: প্রায়শ্চিত্ত ও কর্মকুটি পূজা
১৭ জানুয়ারী: প্রাঙ্গণে মূর্তি প্রবেশ।
১৮ জানুয়ারী (সন্ধ্যা): তীর্থযাত্রা পূজা, জল যাত্রা, জলধিবাস এবং গান্ধাধিবাস
১৯ জানুয়ারী (সকাল): আউশাধিবাস, কেশরাধিবাস, ঘৃতধিবাস
১৯ জানুয়ারী (সন্ধ্যা): ধান্যধিবাস
২০ জানুয়ারী (সকাল): শর্করাধিবাস এবং ফলাধিবাস
২০ জানুয়ারী (সন্ধ্যা): পুষ্পধিবাস
২১ জানুয়ারি (সকাল): মধ্যাধিবাস
২১ জানুয়ারি (সন্ধ্যা): ছায়াধিবাস
২২ জানুয়ারী : প্রাণ প্রতিষ্ঠা
উল্লেখ্য, ভারতীয় আধ্যাত্মিকতা, ধর্ম, সম্প্রদায়, উপাসনা পদ্ধতি, ঐতিহ্য, ১৫০জনেরও বেশি সাধু-মহান্ত যেমন মহামণ্ডলেশ্বর, মন্ডলেশ্বর, শ্রীমহন্ত, মহন্ত, নাগা সহ ৫৯ জনেরও বেশি আদিবাসী, গিরিবাসী, তত্বাসী, দ্বীপপুঞ্জের আদিবাসী সম্প্রদায়ের আচার্য্যের হাত ধরে চলছে প্রাণ প্রতিষ্ঠা।
ভারতের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো পাহাড়, বন, উপকূলীয় অঞ্চল, দ্বীপের বাসিন্দারা এক জায়গায় একসঙ্গে এই ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সাক্ষী রয়েছেন।
স্কু নমি, রামসানেহি, ঘীসাপন্থ, গরীবদাসী, গৌড়ীয়, কবিরপন্থী, বাল্মীকি, শঙ্করদেব (আসাম), মাধব দেব, ইসকন, রামকৃষ্ণ মিশন, চিন্ময় মিশন, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, গায়ত্রী পরিবার, অনুকুল চন্দ্র ঠাকুর ঐতিহ্য, ও মহিমা সমাজ, অক্ষদি সমাজ, নিরঙ্কারি, নামধারী (পাঞ্জাব), রাধাস্বামী এবং স্বামীনারায়ণ, বারকরী, বীর শৈব সহ প্রত্যেক সম্প্রদায় নির্বিশেষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চলছে রাম মন্দিরের।