দীপাবলির দ্বিতীয় দিনে ভাইফোঁটা পালিত হয়। তিথির কাকতালীয় কারণে এ বছর ভাইফোঁটা দু’দিন পালিত হচ্ছে। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে পূজা করেন, তাঁর মঙ্গল কামনা করেন এবং ফোঁটা দেন। কথিত আছে, ভাইফোঁটার দিন তিলক লাগালে ভাই দীর্ঘায়ুর পাশাপাশি সুখ-সমৃদ্ধির আশীর্বাদও পায়।
ভাই এবং বোনের অটুট সম্পর্ক একটি উত্সব হিসাবে পালিত হয়। এর জন্য বছরে দুটি বিশেষ অনুষ্ঠান রয়েছে। তাই রাখী বন্ধন ছাড়াও ভাইফোঁটার দিনটি উৎসবের মতো পালন করা হয়। রাখী বন্ধনের মতো এই উৎসবও প্রত্যেক ভাই-বোনের জন্য বিশেষ। এই উৎসব ভাই দুজ, ভাই টিকা, যম দ্বিতীয়া নামেও পরিচিত।
আমাদের দেশ বিভিন্ন উত্সব এবং রীতিনীতির জন্য বিখ্যাত। আজও এখানে অনেক অনন্য রীতি অনুসরণ করা হয়, যা জানলে আপনি অবাক হবেন। এখানে কিছু জায়গায় ভাইফোঁটায় এক ঐতিহ্য অনুসরণ করা হয়, যেখানে প্রতিপদে ভাইফোঁটা অর্থাত্ দীপাবলির পরের দিনে পালিত হয় ভাইফোঁটা। সাধারণত প্রতি বছর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে পালিত হয় ভাইফোঁটা। তাই একে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া বলা হয় ।
প্রতিপদে ভাইফোঁটা শুনে অনেকেই অবাক হবেন। কিন্ত পূর্ববঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বহুকাল ধরে প্রতিপদ এবং দ্বিতীয়া মিলে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ভাইফোঁটা । ভাইফোঁটা দেওয়ার দিন ক্ষণ তিথি থেকে শুরু করে ফোঁটা দেওয়ার সময়ে বলা ছড়া, ফোঁটার উপকরণ ফোঁটার নিয়ম ইত্যাদির মধ্যে দুই বঙ্গের বেশ কিছুটা পার্থক্য আছে। ‘ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যম দুয়ারে পড়ল কাঁটা’র এই ছড়া তখন বদলে যায়। হয়ে যায়— ‘প্রতিপদে ফোঁটা দ্বিতীয়াতে নীতা, আজ হতে ভাই আমার যম দুয়ারে তিতা।’
নীতে শব্দের আভিধানিক অর্থ নিমন্ত্রণ। সেটাই এখানে লোকমুখে হয়ে উঠেছে নিতা। এই ছড়ার মানে প্রতিপদে ভাইকে ফোঁটা দেবে বোন। পর দিন দুপুরে ভাইবোনের এই উৎসব উপলক্ষে হবে জমজমাট ভূরিভোজ।
ভাইফোঁটা কেন ব্যতিক্রমী ভাবে এক দিন এগিয়ে এল, সে প্রসঙ্গে সমাজবিজ্ঞানের ব্যাখ্যা একেবারেই অন্য রকম। আগে যে পূর্ববঙ্গে ভাইফোঁটা প্রতিপদে দেওয়া হত, তা ছিল নদীমাতৃক। যাতায়াতের ভরসা ছিল কেবল নৌকা। তাই ফোঁটা নিতে এসে দিনের দিন ফিরে যাওয়া ছিল কার্যত অসম্ভব। তাই আগের দিন ভাইদের ফোঁটা দিয়ে লোকাচারের পর্বটুকু সারতেন বোনেরা। পর দিন শুধুই খাওয়া দাওয়া। সেই রীতি মেনেই আজও চলে আসছে প্রতিপদে ভাইফোঁটা।