সংঘাত মিটে যাওয়া তো দূর অস্ত, যতদিন যাচ্ছে তত রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে চাপানউতোর বাড়ছে। তার মূল কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে রাজ্যে আসা দুটি কেন্দ্রীয় দল।
আরও পড়ুন : Lockdown 2.0: পোশাক-মোবাইল থেকে রেস্তোরাঁ-সেলুন, কোন দোকানগুলি খোলা থাকবে, জানাল কেন্দ্র
শনিবার মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে জোড়া চিঠি লেখেন কেন্দ্রীয় দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র। দুটি চিঠির প্রতিটি ছত্রেই রাজ্যের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে বিষোদগার করেন। তিনি বলেন, 'রাজ্যের মুখ্যসচিবকে সংবাদমাধ্যমে বলতে শোনা হিয়েছে যে, কেন্দ্রীয় দল যেখানে খুশি যেতে পারে। কিন্তু কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে গিয়ে রাজ্যের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা কোনও সময় নষ্ট করতে পারবেন না। রাজ্যের এই অবস্থান কেন্দ্রীয় সরকারের উপরোক্ত উদ্ধৃতির (যেখানে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় দলকে সবরকমের সাহায্য করবে রাজ্য) লঙ্ঘন। পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাওয়ার সময় রাজ্য কেন্দ্রীয় দলকে সবধরনের সাহায্য প্রদান করবে বলেই আশা।'
আরও পড়ুন : Covid-19 Updates: যত সমস্যা বাংলার, কিটের অভাব নেই রাজ্যে : ICMR
রাজ্যের থেকে আরও কয়েকটি বিষয় জানতে চায় কেন্দ্রীয় দল। পুলিশের অনুপস্থিতিতে কেন্দ্রের তরফে বিএসএফ কেন্দ্রীয় দলের নিরাপত্তার জন্য কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি একটি মহল থেকে দাবি করা হচ্ছিল, গত ২১ এপ্রিল বিএসএফের অতিথিশালায় গিয়ে রাজ্য পুলিশের এক ডেপুটি কমিশনার বিএসএফ আধিকারিকদের জানিয়েছেন, লকডাউন লাগু থাকায় রাজ্যের অনুমতি ছাড়া কোথাও বেরোতে পারবে না কেন্দ্রীয় দল। তিনি নাকি আরও জানিয়েছেন যে, যদি কেন্দ্রীয় দল ওই অতিথিশালা ছেড়ে বেরোয়, তাহলে একমাত্র বিমানবন্দরে যাওয়ার অনুমতি রয়েছে। সেই বিষয়টি সত্যি কিনা, তা মুখ্যসচিবের কাছে জানতে চান কেন্দ্রীয় দলের প্রধান। একইসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশ মতো কেন্দ্রীয় দল নিজে থেকে কোনও হাসপাতাল বা অন্য জায়গায় গেলে রাজ্য পিপিই দেবে কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : হাতকাটা গেঞ্জি পরে এজলাসে হাজির আইনজীবী, শুনানি মুলতুবি বিরক্ত বিচারপতির
কেন্দ্রীয় দল জানিয়েছে, স্বাস্থ্য দফতর সংক্রান্ত ১০ টি তথ্য-সহ কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তি, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের জোগান, লকডাউন লাগুর মতো বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার হার্ড কপি এখনও পায়নি কেন্দ্রীয় দল। অপূর্ব চন্দ্র বলেন, 'গত ২০ এপ্রিল সকাল ১০ টা থেকে কলকাতায় রয়েছে। তখন থেকে চারটি চিঠি লেখা হয়েছে। কিন্তু একটিরও উত্তর দেয়নি রাজ্য। এমনকী গত ২৩ এপ্রিল যে প্রেজেন্টেশন দেওয়া হয়েছিল, তারও হার্ড কপি এখনও দেওয়া হয়নি।'
আরও পড়ুন : করোনা জয়ী মানামীর থেকে যুদ্ধ জয়ের গল্প শুনবেন মিমি চক্রবর্তী
পরে আরও একটি চিঠিতে ডুমুরজলা কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র ও উলুবেড়িয়ার সঞ্জীবন হাসপাতাল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় দলের প্রধান। মুখ্যসচিবকে লেখা সেই চিঠিতে অভিযোগ করেন, ডুমুরজলা কেন্দ্রের খাদ্য ও থাকার বন্দোবস্ত ভালো হলেও সেখানে ভরতি থাকা করোনা সন্দেহভাজনদের যেভাবে ভ্যানে ককরে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তাতে সামাজিক বিধির ছিটেফোঁটাও বজায় থাকে না। তাঁরা করোনার কবলে করতে পারেন বলে সেখানে ভরতি ব্যক্তিদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, নিজের কাছে ফোন থাকায় হাসপাতালে ভরতি তাঁদের আত্মীয়ের সুরক্ষার বিষয়ে কোনও খবর জানতে পারেন না।
আরও পড়ুন : Covid-19 Updates: প্লাজমা থেরাপিতে কি করোনা মুক্তি? দিল্লিতে প্রায় সুস্থ গুরুতর চার রোগী
অন্যদিকে, সঞ্জীবন হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা থেকে শুরু করে অন্যান্য পরিকাঠামো নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় দল। তবে স্বাস্থ্যকর্মী 'পিপিই পরতে হওয়ার জন্য' তাঁরা চার ঘণ্টার শিফটে কাজ করছেন। ১৪ দিন ছাড়া কোয়ারেন্টাইনে যাচ্ছেন। তার জেরে মোট স্বাস্থ্যকর্মী সংখ্যা ২৫ শতাংশ নিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। ফলে ৩২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ৭০ জনের বেশি করোনা আক্রান্তকে ভরতি করা যাবে না বলে ধারণা কেন্দ্রীয় দলের। সেজন্য আরও স্বাস্থ্যকর্মীর প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন অপূর্ব চন্দ্র।