বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর কথা মতো চালু করেন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার। সরাসরি মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যেতে শুরু করে। যা হাতে পেয়ে আপামর বঙ্গের মহিলারা বেশ খুশি। সেই টাকা অনেক মহিলাই জমিয়েছিলেন নানা সাংসারিক জিনিস কেনার জন্য। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা নিয়ে নানা পরিকল্পনা ছিল গ্রামের মহিলাদের। কিন্তু সেই পরিকল্পনা পাল্টে গিয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দিয়ে এবার গ্রামে প্রথম দুর্গাপুজো হচ্ছে। মগরাহাটের মলয়ার মহিলা বাসিন্দারা গ্রামে কখনও দুর্গাপুজো দেখেননি। এবার কারও কাছে হাত না পেতে সরকারি প্রকল্পের জমানো টাকায় দুর্গাপুজো করছেন ওই মহিলারা।
শুনতে অবাক লাগলেও এখন এটাই বাস্তব। এই মহিলারা এখানে প্রত্যেকবার টিভির পর্দাতেই দুর্গাপুজো দেখেন। আর তা দেখেই আনন্দে কাটান উৎসবমুখর দিনগুলি। এবার এই গ্রামের মহিলারাই দেখিয়ে দিতে চলেছেন ইচ্ছে থাকলে উপায়ও হয়। এভাবে দুর্গাপুজো যে করা যেতে পারে তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। তাই এই গ্রামের মহিলারা আলোচনা করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা দিয়ে দুর্গাপুজো করতে চলেছেন। যা একপ্রকার বিরল। আগে অষ্টমীর অঞ্জলি দিতেও ছুটতে হতো গ্রাম থেকে অনেকটা দূরে। আবার অনেকে অঞ্জলি দিতেই পারতেন না। সেখানে এবারের দুর্গাপুজোয় এই গ্রামকে উজ্জীবিত করলেন নারীশক্তি নামে মহিলাদের স্বনির্ভর দল।
এখানের একাতারা পঞ্চায়েতের এই গ্রামে অধিকাংশ মানুষের প্রধান জীবিকা কৃষি। মহিলারা টুকটাক সেলাইয়ের কাজ করতেন। আর সংসার সামলানো তো আছেই। দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি নিয়ে যখন অন্যান্য গ্রাম থেকে শহর মেতে থাকে তখন এখানের মানুষজন সেই আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকতেন। এবার মলয়া গ্রামের মহিলা বাসিন্দারা নিজেদের উদ্যোগে শুরু করছেন দুর্গাপুজো। যা একপ্রকার রোল মডেলও বলা যায়। অর্থ জোগাড়ের কারণেই কখনও দুর্গাপুজোর উদ্যোগ নিতে সাহস দেখাননি তাঁরা। কিন্তু এবার পরিকল্পনা করে দুর্গাপুজো করতে রাজি হন গ্রামের মহিলারা।
আরও পড়ুন: ‘ভরপেট খেয়ে ইফতার পার্টিতে গিয়ে ঢেঁকুর তোলেন’, মমতাকে পুজো নিয়ে কটাক্ষ দিলীপের
এই পরিকল্পনা তাঁদের করতে হয়েছিল ২০২২ সালে। গ্রামে দুর্গাপুজো করা নিয়ে নারীশক্তি বাহিনীর সম্পাদক রূপশ্রী মালি বলেন, ‘দুর্গাপুজো করব ইচ্ছা থাকলেও উপায় ছিল না। কারণ একদিকে অর্থ অন্যদিকে কেউই সমর্থন করেননি। কিন্তু যখন গ্রামের মহিলারা একে একে এগিয়ে এল তখন উৎসাহ বেড়ে গেল। দুর্গাপুজোর অধিকাংশ খরচ দিদির দেওয়া লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা থেকেই হচ্ছে। সামান্য অর্থ গ্রামের মানুষ দিয়েছে। এবার থেকে প্রত্যেক বছরই এভাবে দুর্গাপুজো করতে পারব। গ্রামে এই প্রথম দুর্গাপুজোর আয়োজনে সবাই আনন্দিত। এটা প্রথমবার বলে ছোট করে করা হচ্ছে। আগামী বছর বড় করে হবে।’