দেশ জুড়ে নানা সময়ই শোনা যায় নানা সাম্প্রদায়িক হানাহানির খবর। তবে এটাই তো সব নয়। আসলে বহুকাল ধরে সম্প্রীতির গান গাইছে এই ভারত। সম্প্রীতির গান গাইছে এই বাংলা। তারই নজির গড়ল নদিয়া। নদিয়ার থানারপাড়া এলাকার শুভরাজপুর গ্রামে এমনই সম্প্রীতির নজির দেখা গেল। সেই গ্রামে কেবলমাত্র একঘর হিন্দুর বাস। সেই গ্রামে মারা যান মঞ্জুশ্রী নামে এক মহিলা। ৬৭ বছর বয়সে মারা যান তিনি। শুক্রবার রাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু বাড়িতে কেবলমাত্র তাঁর বৃদ্ধ স্বামী। তবে এসব নিয়ে ভাবতে হয়নি। মঞ্জুশ্রীকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন মুসলিম প্রতিবেশীরা।
কিন্তু হাসপাতালেই মারা যান মঞ্জুশ্রী দেবী। এরপর ভোরবেলা গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা করা হয় যে মারা গিয়েছেন মঞ্জুশ্রী দেবী। এরপরই গ্রাম থেকে একে একে বাসিন্দারা বেরিয়ে আসেন। একেবারে যেন বাড়ির প্রিয়জন ছেড়ে চলে যাচ্ছেন চিরদিনের জন্য। কান্নায় ভেঙে পড়েন মেহেরুন্নিসা, রাজিয়া, শাহনারারা।
আসলে মঞ্জুশ্রী দেবী নিজেও কোনওদিন বুঝতে পারেননি তিনি এমন একটি গ্রামে থাকেন যার চারদিকে শুধুই অন্য ধর্মের মানুষ। কারণ তাঁদের ধর্মাচারণে কোনও দিন কোনও সমস্যা হয়নি।
আর এবার বিদায়বেলাতেও, দুঃখের দিনে পাশে থাকলেন সেই ভিন্ন ধর্মের মানুষরাই। ফজরের নমাজের মধ্যেই দোয়া পড়েন মসজিদের ইমাম।
এরপর মঞ্জুশ্রীদেবীর অন্য়ান্য় আত্মীয়দের ডাকা হয়। দুই আত্মীয়র সঙ্গে শেষযাত্রায় কাঁধ দিলেন গ্রামের দুই মুসলিম যুবক। সেই সঙ্গেই শেষযাত্রায় সঙ্গী হন গ্রামের কয়েকজন। যে সমস্ত আত্মীয়রা এসেছিলেন তাঁদের জন্য় খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করে মসজিদ কর্তৃপক্ষ। আসলে ধর্ম যাই হোক না কেন সুখের দিনে যেমন সকলে মিলেমিশে ছিলেন এবার কষ্টের দিনেও সকলে মিলে একসঙ্গে থাকলেন। চোখের জল মুছলেন গ্রামের মহিলারা। গঙ্গার ঘাটে দাহ করা হয় মঞ্জুশ্রীদেবীকে। সন্ধ্যা নেমে আসে। গ্রামটা কেমন যেন ফাঁকা ফাঁকা লাগে। আসলে প্রিয়জন চলে গিয়েছেন। ধর্মে তিনি যাই হোন না কেন সম্প্রীতির বাংলায় এটাই তো স্বাভাবিক।