‘ভাল বাদাম, ছোলা, ঝুরি ভাজা খেলে বলবেন’—এই কথাটি শোনা যায় সমস্ত লোকাল ট্রেনে। হ্যাঁ, স্থানীয় হকাররা এভাবেই হাঁক পেড়ে যাত্রীদের মুখে তুলে দেন মুখরোচক খাবার। বিনিময়ে পান টাকা। আর তা জমিয়েই চলে তাঁদের সংসার। তবে এবার সেই রীতি বন্ধ হতে চলেছে। হাওড়া, শিয়ালদা দিয়ে যাতায়াত করে ৪৭টি লোকাল ট্রেনে বন্ধ হতে চলেছে হকারি। আর হকারদের সরঞ্জাম পাওয়া যাবে ভেন্ডারদের কাছে। এই প্রক্রিয়া নিয়ে আসতে নয়ডার একটি সংস্থাকে দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে।
কেমন করে মিলবে হকারদের সামগ্রী? হকারদের বিক্রি করা সামগ্রী–আইসক্রিম থেকে বাদাম, সিঙাড়া সব বিক্রি করবেন ভোন্ডাররাই। এই পদক্ষেপের জেরে হকারদের আর ট্রেনে দেখা মিলবে না। দীর্ঘদিন ধরে যে হকাররা তাঁদের জিনিসপত্র বিক্রি করে সংসার চালাতেন তাঁরা এখন কার্যত বেকার হয়ে পড়বেন। এই আশঙ্কা থেকে এখন হকারদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
ঠিক কী বলছে তৃণমূল কংগ্রেস? এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এই পদক্ষেপকে ‘ভয়াবহ’ বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই কর্পোরেটাইজেশনের জেরে গরিব হকাররা বেকার হয়ে পড়বেন। সংসার চালাবার বিকল্প পথ পাবেন না। ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখা দেবে। এই সিদ্ধান্ত বাতিলের জন্য আন্দোলনে নামবে তৃণমূল কংগ্রেস।’
আর কী জানা যাচ্ছে? রেল সূত্রে খবর, লোকাল ট্রেনগুলিতে হকাররা যেসব জিনিস বিক্রি করেন সেগুলি বিক্রির জন্য নয়ডার একটি সংস্থা চুক্তিবদ্ধ হয়েছে আইআরসিটির সঙ্গে। তার ফলে লোকাল ট্রেনে হকাররা উঠতে পারবেন না। ভিড়ের মধ্যে হকাররা উঠলে অসুবিধা হয়। তাছাড়া হকাররা নানা জায়গা থেকে আসেন। সবাইকে ট্র্যাক করা সম্ভব নয়। তাই ট্রেনের ভেন্ডার থেকে জিনিসপত্র বিক্রি করা হবে। তাছাড়া এটা রেল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিয়েও আশঙ্কা থেকে যায়। সবদিক ভেবেই এমন পদক্ষেপ করা হয়েছে।
ঠিক কী বলছে রেলের আরপিএফ? এদিকে এই হকারদের সরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে এখন জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে পূর্ব রেলের আরপিএফের আইজি পরম শিব জানান, বেআইনিভাবে কাউকে ট্রেনে কোন জিনিস বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। ট্রেনে উঠলেই তাদের গ্রেফতার করা হবে। অন্যদিকে আইএনটিটিইউসির পূর্ব রেলের চত্বরের হকারদের সাধারণ সম্পাদক বাপি ঘোষ বলেন, ‘এই রেলের উপর নির্ভর করে লক্ষাধিক হকার রয়েছেন। তাঁদের ভাত মারার প্রকল্প কার্যকর করতে দেওয়া হবে না। হকারি যেমন চলছিল তেমন চলবে।’