অবশেষে গ্রেফতার হল সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহান। গত ৫ জানুয়ারি থেকেই বাংলার সবচেয়ে আলোচ্য নাম ছিল শাহজাহান। এহেন শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ বহু নেতাকে ধরলেও অধরা ছিল 'সন্দেশখালির বাঘ'। তা নিয়ে সম্প্রতি আবার নিজের যুক্তি খাড়া করেছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আবার আদালত এরই মাঝে পর্যবেক্ষণ করে, পুলিশ শাহজাহানকে ধরতেই পারে। এই আবহে দীর্ঘ ৫৫ দিন পর শাহজাহানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে জানা গিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, তৃণমূল নেতাকে মিনাখাঁ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, বসিরহাট আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে শাহজাহানকে। আপাতত আদালতের লকআপে রাখা হয়েছে অভিযুক্ত নেতাকে। বৃহস্পতিবারই 'সন্দেশখালির বাঘ'কে আদালতে হাজির করা হবে। (আরও পড়ুন: এক ধাক্কায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া কমাল রেল, ভোটের আগে বড় উপহার যাত্রীদের)
আরও পড়ুন: 'কেন্দ্রীয় হারেই ডিএ রাজ্যে...', বড় মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর
এর আগে গত ২৫ তারিখ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, 'শেখ শাহাজাহানকে ধরার ক্ষেত্রে রাজ্যের হাত বেঁধে রেখেছে বিচার ব্যবস্থা'। তবে এর একদিন পরই ২৬ ফেব্রুয়ারি, হাই কোর্টের তরফ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সেই দাবি কার্যত খারিজ করে দেওয়া হয়েছিল। সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, শেখ শাহজাহানকে গ্রেফাতারি কোনও বাধা নেই। পাশাপাশি সন্দেশখালি মামলায় শেখ শাহজাহানকে যুক্ত করার নির্দেশও দিয়েছিলেন উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম।
আরও পড়ুন: শীঘ্রই আসবে পজিটিভ খবর, রাজ্য সরকারি কর্মীদের বেতন নিয়ে বড় বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর
উল্লেখ্য, বিগত ৫ জানুয়ারি থেকে শাহজাহানের খোঁজ চলছিল। তবে এতদিন তিনি অধরা ছিলেন। এরই মাঝে যৌন হেনস্থার অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এই আবহে এখন রাজ্য রাজনীতির সবচেয়ে আলোচ্য বিষয় সন্দেশখালি। প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতির তদন্তে শাহজাহানের বাড়িতে গিয়েছিল ইডি। সেখানে আক্রান্ত হয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। কয়েকদিন পরই সন্দেশখালিতে শাহজাহান, তাঁর ঘনিষ্ঠ শিবু, উত্তমদের বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হয়। সেই শাহজাহান বাহিনীর বিরুদ্ধে সন্দেশখালিতে সন্ত্রাসের রাজ চালানোর অভিযোগ ওঠে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মারধর, হুমকি, অত্যাচার, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানির ঘটনায় সরাসরি যুক্ত ছিল শাহজাহান বাহিনী। পরবর্তীতে উত্তম এবং শিবুকে গ্রেফতার করা হয়। পরে অজিত মাইতিকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে শাহজাহান এতদিন অধরা ছিল।(আরও পড়ুন: 'ভারতীয়ই নন', ট্রেকারের হেল্পার থেকে 'সন্দেশখালির বাঘ', কে এই শেখ শাহজাহান?)
শাহজাহানকে নিয়ে অভিষেকের যুক্তি কী ছিল?
শাহজাহান প্রসঙ্গে অভিষেক বলেছিলেন, 'ইডি আধিকারিকদের ওপর হামলার অভিযোগ করে ইডির দায়ের করা মামলার তদন্তের জন্য কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত বিশেষ তদন্তকারী দলের তৈরির নির্দেশ দেন। সেই দলে থাকার কথা ছিল রাজ্য পুলিশ ও সিবিআইয়ের এক জন করে প্রতিনিধির। এর কিছুদিন পরে ইডি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে আবেদন করে ওই নির্দেশের ওপর স্থগিতাদেশ চায়। ইডির আবেদনের ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ সেই স্থগিতাদেশ মঞ্জুর করে। স্থগিতাদেশ মানে তদন্ত হবে না। স্থগিতাদেশ মানে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। স্থগিতাদেশ মানে কাউকে নোটিশ পাঠিয়ে ডাকা যাবে না। এটা কে করেছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? এটা করেছে হাইকোর্টের বিচারপতি। সেই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ৬ মার্চ। হাইকোর্ট, বিচারব্যবস্থা যদি রাজ্য পুলিশ প্রশাসনের হাত পা বেঁধে দেয়, এফআইআর স্থগিত করে দেয়, তাহলে পুলিশ গ্রেফতার করবে কী ভাবে?’ অবশ্য অভিষেকের মন্তব্যের বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করেছিলেন আদালত বান্ধব। সেই সময় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেছিলেন, 'শাহজাহানকে গ্রেফতার না করার জন্য পুলিশকে কোনও নির্দেশই দেওয়া হয়নি। আমরা পুলিশকে বলিনি, যে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না। ইডির মামলায় শুধু সিট গঠনের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল।' পরে তৃণমূল নেতারা দাবি করেন, ৭ দিনের মধ্যে শাহজাহানকে গ্রেফতার করা হবে। অবশ্য সেই 'ডেডলাইনের' অনেক আগেই পুলিশের জালি শাহজাহান।