কলকাতা হাইকোর্টে রায়ে চাকরি হারিয়েছেন রাজ্যের স্কুলগুলির প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী। বিপুল সংখ্যক শিক্ষক চাকরি হারানোর ফলে ধাক্কা খাবে স্কুল ছাত্র শিক্ষকের অনুপাত।
পরিসংখ্যান বলছে, এই রায়ের ফলে সরকারি স্কুলগুলিতে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির চারজনের মধ্যে একজন শিক্ষক পদ শূন্য হয়েছে। রাজ্যের সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের সংখ্যা ১৯,৫০০। এর মধ্যে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির জন্য মোট শিক্ষক সংখ্যা ৭৬ হাজার। হাইকোর্টের রায়ে, ১৮ হাজারের বেশি শিক্ষকের চাকরি গিয়েছে। এর ফলে ছাত্র-শিক্ষককের অনুপাতিক ব্যাপক ব্যবধান দেখা দিয়েছে। গরমের ছুটি পড়ে যাওয়াতে অবস্থাটা বোঝা যাচ্ছে না। ছুটির পর স্কুল খুললে সংকটটা স্পষ্ট হবে।
শুধু শিক্ষক নয় আদালতের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন, ৬০০০ অশিক্ষককর্মী। এর মধ্যে গ্রুপ সি এবং গ্রুপ ডি-র কর্মীরা রয়েছে। ফলে স্কুলে প্রশাসনিক কাজকর্মও ধাক্কা খাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন অনুযায়ী ফারাক্কার অর্জুনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ হাজার পড়ুয়ার বিপরীতে ৬০ জন শিক্ষক ছিলেন। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১৬ সালে স্কুল নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল হওয়ার পর সেখানে রইল মাত্র ২৪ জন শিক্ষক।
কোচবিহারের ধৈর্য নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে এখন মাধ্যমিকের ইতিহাস এবং উচ্চ মাধ্যমিকের রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও এডুকেশন পড়ানোর মতো কেউ নেই।
কলকাতার যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলে চাকরি গিয়েছে একমাত্র গ্রুপ ডি কর্মচারীর। যিনি স্কুলের বিজ্ঞান গবেষণাগারে সাহায্য করতেন।
আরও পড়ুন। ২০১৬ প্যানেল বাতিলে বাংলার স্কুলগুলিতে কতটা শূন্যতা তৈরি হবে? বিস্ফোরক পরিসংখ্যান পর্ষদের
কুলতালি দক্ষিণের দেবীপুর করুণাময়ী বালিকা বিদ্যায়তনে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৭৫ জন। তাদের পড়ানোর জন্য ছয়জন শিক্ষক ছিলেন। সেখানে বর্তমানে মাত্র চারজন শিক্ষক রয়েছেন। বীরভূমের রাজনগর উচ্চ বিদ্যালয় তার বিভিন্ন বিভাগকে কার্যকরী রাখার জন্য ‘স্বেচ্ছাসেবী’ চেয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
বিদ্যালয়গুলি আশঙ্কা শিক্ষক না থাকায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পঠনপাঠন বন্ধ করতে হতে পারে। যদিও প্রধান শিক্ষকরা চেষ্টা করছেন যাতে স্কুলে পড়াশুনো অব্যাহত থাকে। তাঁরা অবিলম্বে নিয়োগ চেয়েছেন। শিক্ষা দফতরের আধিকারিকরা বলছেন যে স্বল্প নোটিশে এত বড় সংখ্যক শূন্যপদ পূরণ করা সহজ হবে না। এছাড়াও, হাইকোর্টে রায়ে নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে যে স্কুল সার্ভিস কমিশন ৪ জুন লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার ১৫ দিন পর নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারে। ততদিনে গরমের ছুটির পর সব স্কুল খুলে যাবে।
আরও পড়ুন। চাকরিহারা শিক্ষকদের লোন কয়েক কোটি, আদায় হবে কীভাবে, মাথায় হাত ব্যাঙ্কগুলির