কোকরাঝাড় লোকসভা কেন্দ্রটি অসমের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত। ১৯৬৭ সাল থেকে এই লোকসভা কেন্দ্রটিতে নির্বাচন সংঘটিত হয়ে আসছে। কোকরাঝাড় অঞ্চলটি বোরোল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অঞ্চলের অন্তর্গত। এটি ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য অসমের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। কোকরাঝাড় শহরটি গৌরাঙ্গ নদীর তীরে অবস্থিত। কোকরাঝাড় শব্দটি কোক এবং রাজহর এই দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। কোক মানে কোচ এবং রাজহর মানে রাজা৷ কোকরাঝার লোকসভা কেন্দ্রটি কোকরাঝাড়, চিরং এবং বক্সা তিনটি জেলা জুড়ে অবস্থিত। এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত বিধানসভা ক্ষেত্রগুলি হল গোঁসাইগাঁও, ডটমা, কোকরাঝাড়, বাওখুংড়ি, পর্বতঝোড়া, সিলডি-চিরাং, বিজনী মানস এবং বক্সা। এই লোকসভা আসনটি তপশিলি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। গত দুই বারের সাংসদ নবকুমার সরনিয়া এবার লড়াইয়ে নেই। তাঁর মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে যায় উপযুক্ত তফশিলি জনজাতির শংসাপত্র না দেখাতে পারায়। তাঁর অভাবে মূল লড়াই United People’s Party Liberal, ইউপিপিএল ও Bodoland People’s Front, বিপিএফের মধ্যে। তৃতীয় পর্যায়ে সাত মে এখানে ভোটগ্রহণ করা হবে।
১৯৬৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোকরাঝাড় কেন্দ্রটি থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের আর ব্রহ্মা জয়ী হন। ১৯৭১ সালের লোকসভা নির্বাচনে কেন্দ্রটি জাতীয় কংগ্রেসের দখলে থাকলেও সাংসদ পদে বসেন ডি বসুমাতারী। ১৯৭৭ সালের লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হন নির্দল প্রার্থী চরণ নার্জারি। ১৯৮৪-এর লোকসভা নির্বাচনে। এই কেন্দ্রটি থেকে প্লেনস ট্রাইবাল কাউন্সিল অফ অসমের পক্ষ থেকে সমর ব্রহ্ম চৌধুরী জয় লাভ করেন। ১৯৯১ সালের লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রটি থেকে নির্দল প্রার্থী সত্যেন্দ্রনাথ ব্রহ্মা চৌধুরী জয়ী হন ২ লক্ষ ৬৩ হাজারের বেশি ভোটে। ১৯৯৬ সালের লোকসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী লুক ইসলারি জয়ী হন এই কেন্দ্র থেকে। ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০৪ এবং ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোকরাঝাড় কেন্দ্র থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন সামসুমা খুংগুর বিশ্বমুথিয়ারি।
২০০৪ সালের নির্বাচনে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৪ লক্ষ ৮৪ হাজার রেকর্ড মার্জিনে পরাজিত করেন তিনি। ২০০৪ সালের লোকসভায় এই কেন্দ্রে ৭৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সামসুমা খুংগুর বিশ্বমুথিয়ারি বোরোল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট এর নামে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং ১ লক্ষ ৯০ হাজার ভোটে জয়ী হন। ৭৩.৭ শতাংশ ভোট পড়েছিল ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচনে। ২০১৪ এবং ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী নবকুমার সরনিয়া সংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে নবকুমারের সঙ্গে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর জয় ভোটের ব্যবধান ছিল ৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ৭০০ ভোট। ২০১৯ সালের নির্বাচনে জয়ের ব্যবধান কমে দাঁড়ায় ৩৭৮৬। এই নির্বাচনে বোরোল্যান্ড পিপল ফ্রন্ট-এর প্রমিলা রানী ব্রহ্মা দ্বিতীয় স্থান দখল করেন।
এবার সরনিয়া ভোটে নেই, তাঁর মনোনয়ন পত্র বাতিল হয়ে যাওয়ার। মূল লড়াই এনডিএ-র অংশ ইউপিপিএল-এর জয়ন্ত বাসুমাতারী ও বিপিএফ প্রার্থী কাম্পা বরগোয়ারি-র মধ্যে। বর্তমানে বিধায়ক জয়ন্ত, অন্যদিকে কাম্পা বিটিসি-র প্রাক্তন সহপ্রধান হলেন কাম্পা। বোরো টেরিটরিয়াল কাউন্সিল (বিটিসি) ১৭ বছর ধরে শাসন করেছে। ২০২০ সালে ইউপিপিএল-এর উত্থানের পরেই খেলা বদলে যায়। জয়ন্তর জন্য প্রচার করতে কোকরাঝাড়ে এসেছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা।
এবার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কোন কেন্দ্র থেকে কোন রাজনৈতিক দল জয়লাভ করেছিলেন। ২০২১ সালের লোকসভা নির্বাচনে গোঁসাইগাঁও কেন্দ্রটি থেকে বোরোল্যান্ড পিপল ফ্রন্ট-এর পক্ষ থেকে মজেন্দ্র নার্জারি ১০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন। কোকরাঝাড় পশ্চিম কেন্দ্রটি থেকে রবি রাম নার্জারি বোরোল্যান্ড পিপলস ফ্রন্টের পক্ষ থেকে ১২ হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন। কোকরাঝাড় পূর্ব কেন্দ্রটি থেকে লরেন্স ইসলারি ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারালের পক্ষ থেকে ২০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন। শিবলী কেন্দ্র থেকে জয়ন্ত বাসুমাতারী ৩১ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন। বিজনী কেন্দ্র থেকে বিজেপির অজয় কুমার রায়ের এক হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হন। শরভোগ কেন্দ্রটি থেকে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া মার্কসবাদীর মনোরঞ্জন তালুকদার ১০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী হন। ভবানীপুর বিধানসভায় অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট-এর পানিধর তালুকদার তিন হাজারের বেশি ভোটে জয়যুক্ত হয়েছিলেন। তামুলপুর এবং বড়মা দুটি কেন্দ্রে যথাক্রমে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারেলের পক্ষ থেকে এল আর বোরো এবং ভূপেন বড় জয়ী হয়েছিলেন।