চলার পথটা ছিল কঠিন। জীবনের চড়াই–উতরাই মেনে নিয়েও উপার্জন করার স্বপ্নে লক্ষ্য স্থির ছিল। সেই স্বপ্নপূরণ করতে প্রথমে শুরু হয় ভিক্ষে করা। তারপর অন্যের বাড়িতে ফাই–ফরমাশ খাটা, সেখান থেকে দোকানে কাজ—এভাবেই জীবনের লড়াইটা চলছিল। কিন্তু হঠাৎ জীবনে এল আমূল পরিবর্তন। এই পরিবর্তন লড়াই করেই এসেছে। শুধু সেখানে এগিয়ে এল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের মৎস্য দফতর। আর ওই লড়াকু ব্যক্তিটি আজ সফল মাছ বিক্রেতা হয়ে উঠলেন। নন্দীগ্রাম–১ ব্লক মৎস্য বিভাগ মাছকে কেন্দ্র করে সকল প্রকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। উৎসাহিত করে চলেছে মাছ চাষি, মাছ বিক্রেতা, মাছ আহরণকারীদের। তাই গ্রামীণ মানুষজন মাছকে কেন্দ্র করে জীবিকার নতুন দিশা পাচ্ছে। এখন নন্দীগ্রাম–১ ব্লক মৎস্য বিভাগের উদ্যোগে ‘মাছ ফেরিওয়ালা’দের জন্য প্রকল্প আনা হয়েছে।
এই প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে একটি বিরল ঘটনা ঘটেছে নন্দীগ্রামে। যে নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের আতুঁড়ঘর, যে নন্দীগ্রাম দেখেছে কঠিন রাজনৈতিক লড়াই—সেই খবরে উঠে আসা নন্দীগ্রামে প্রচারের আলোকবৃত্তের বাইরে থাকা ব্যক্তির জীবনেও পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। সম্প্রতি একটি সভা থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, মাছ উৎপাদনে বাংলাকে এক নম্বর স্থানে নিয়ে যাবেন। তারপরই এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। নন্দীগ্রামেই দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে এক মাছ ফেরিওয়ালা। অনাথ, ভিক্ষে করে বেঁচে থাকা থেকে মাছ বিক্রি করে জীবনের পথে ঘুরে দাঁড়ানোর জীবন কাহিনী জয়দেব মুনিয়ানের। নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া এলাকার ‘মাছ ফেরিওয়ালা’ এই জয়দেব।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? ছোটবেলায় বাবা–মা মারা যায়। তখন থেকেই অনাথের জীবন শুরু জয়দেব মুনিয়ানের। শুরু হয়ে গেল ভিক্ষে করে জীবন চালানো। পরে কলকাতা এসে লোকের বাড়িতে বাসন মাজা, কাপড় ধোয়া, দোকানে কাজ করা এবং ছোটখাট কারাখানায় কাজ করে জীবন চালাতেন। পরে এক মাছ বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ হয়ে গেল। তার কাছ থেকে সামান্য মাছ কিনে মাছ বিক্রি করা শুরু। এর পরে এগিয়ে এল সরকার। সেই জয়দেব ২৮ টাকা নিয়ে মাছ ব্যবসা শুরু করে, আজ নন্দীগ্রামে ৬ বিঘা জমি কিনেছেন। কল্পনার গল্প মনে হলেও আজ এটাই বাস্তব।
আরও পড়ুন: ‘ইন্ডিয়া নামটা প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হয়েছে’, মুজাহিদিন কটাক্ষের জবাব দিলেন মমতা
তারপর ঠিক কী ঘটল? নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া গ্রামে ‘মাছ ফেরিওয়ালা’ হয়েই কাজ শুরু করেন জয়দেব। এলাকার মানুষ তাঁকে হাঁক পাড়েন, ‘ও মাছ ফেরিওয়ালা একটু শুনবেন।’ নন্দীগ্রাম ব্লক মৎস্য দফতরের সহায়তায় মাছ ফেরি করার জন্য মোটর সাইকেল–সহ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মাছের বাক্স পেয়েছেন। জয়দেব এই মাছ বিক্রি করেই তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। জয়দেব মুনিয়ান জানান, নন্দীগ্রাম–১ ব্লক মৎস্যচাষ সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন কুমার সাহু মহাশয়ের অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। এই গোটা ঘটনা নিয়ে সুমন সাহু হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ডিজিটালকে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘সামান্য পুঁজি নিয়েও মাছ চাষ বা ব্যবসায় নেমে সাফল্য অর্জন করা যায় সেটা দেখিয়ে দিয়েছেন জয়দেববাবু। তাঁর মতো মাছ বিক্রেতা অনেককে কাছে উৎসাহ দেবে। মাছ কেন্দ্রীক উপার্জনে মৎস্য দফতরের প্রকল্প তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’