২০০৯-এর ২৬ মে থেকে ২০২১-এর ২৬ মে। ঠিক ১২টা বছর, একটা যুগ। ঘূর্ণিঝড় আয়লার যুগান্তরে আঘাত হানল ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আর আরেকবার আয়লার স্মৃতি মনে করাল উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন লাগোয়া বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। কোটালের ওপর ঘূর্ণিঝড়ের জলোচ্ছ্বাসে মুহুর্মুহু ভাঙল বাঁধ। ফের লোনা জলে প্লাবিত হল কৃষিজমি। প্রশ্ন হল, তাহলে ১২ বছরে হলটা কী?
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জন্য আগে থেকেই সরানো হয়েছিল নীচু এলাকার বাসিন্দাদের। তাতে প্রাণহানি এড়ানো গেলেও বাঁধ ভেঙে জল ঢোকায় অনেকের ফেরার জায়গা রইল না। অনেকের ফসল গেল লোনা জলের তলায়। যে জমিতে আবার কবে চাষ করা যাবে জানেন না চাষিরাও। অনেক জায়গায় বুক দিয়ে বাঁধ আগলাতে দেখা দেল যুবকদের।
এদিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে এই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে শোনা যায়। ঘূর্ণিঝড়ের জলোচ্ছ্বাসে যে সুন্দরবনের নদীবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তা স্বীকার করে নেন তিনি। সেচ দফতরের সচিবকে বলেন, আপনার দফতরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সব থেকে বেশি। কী করে স্থায়ী ভাবে বাঁধ মেরামত করা যায় তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। প্রতি বছর বাঁধ ভাঙবে আর সরকার টাকা দেবে, এটা হতে পারে না।
তবে সুন্দরবনের বাঁধগুলির অবস্থা যে শোচনীয় তা কারও অজানা ছিল না। বিধানসভা নির্বাচনের মুখে প্রাক্তন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলে জানা যায়, সেদ দফতরের অধীনে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোতেই দফতর হারাতে হয়েছিল তাঁকে। বনদফতরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যদিও এ নিয়ে কোনও দিন মুখ খোলেননি রাজীববাবু।
আয়লার পর অতিবাহিত ১২ বছরের মধ্যে ১০ বছর রাজ্যের ক্ষমতায় তৃণমূল। প্রশ্ন হল, এতদিনে সুন্দরবনের নদীবাঁধের হাল ফিরল না কেন? কেন ঘূর্ণিঝড় এলেই এখনো বাস্তু ও জীবিকাচ্যূত হতে হবে দুর্গম এলাকার মানুষগুলোকে? কেন ঝড় চলে যাওয়ার পর বাঁধ মেরামতির কথা মনে পড়ল মুখ্যমন্ত্রীর? না কি সচিবকে প্রকাশ্যে দেওয়া নির্দেশ মানুষের ক্ষোভ প্রশমণের চেষ্টামাত্র?