পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের জৈনভূমি থেকে উদ্ধার হল বহু পুরনো বৌদ্ধ মূর্তির মস্তক। ঐতিহাসিকদের অনুমান, উদ্ধার হওয়া এই মূর্তি পঞ্চম শতাব্দীর। এই মূর্তি উদ্ধারকে কেন্দ্র করে শোরগোল পড়ে যায়। সোমবার সন্ধ্যায় পুরুলিয়ার পুঞ্চা ব্লকের ধাদকি মোড়ের কাছে একটি ফাঁকা মাঠ থেকে এই মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। যদিও এটি বুদ্ধদেবের মূর্তি কিনা তা নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। তবে প্রশাসনের দাবি, উদ্ধার হওয়া এই মূর্তিটি হল বুদ্ধদেবের ‘মহাপরিনির্বাণ’ লাভের মূর্তি। যেখানে মূর্তি উদ্ধার হয়েছে সেখান থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক প্রত্নস্থল জৈনক্ষেত্রের পটভূমি পাকবিড়রা। তাহলে জৈনভূমি থেকে কীভাবে এল বুদ্ধ মূর্তি উদ্ধার হল তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: মালদায় জাল ফেলতেই পুকুর থেকে উদ্ধার প্রায় ১ হাজার বছরের পুরোনো বুদ্ধমূর্তি!
উদ্ধার হওয়া মূর্তি দেখতে এদের ভিড় করেন স্থানীয়রা। পুরুলিয়া জেলার তথ্য সংস্কৃতি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মূর্তি বুদ্ধদেবের ‘নির্বাণলাভের’। মূর্তিটি কষ্টিপাথর দিয়ে তৈরি বলে অনুমান করা হচ্ছে। বুদ্ধ মূর্তির মস্তক খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে তৈরি হয়েছিল। এটি একটি সারনাথ মূর্তি। তবে এই মূর্তি ঠিক কতটা পুরনো তা জানার জন্য রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব অধিকারের কলকাতার বেহালার রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব সংগ্রহালয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এই মূর্তি। সেখানে পরীক্ষা করে দেখা হবে এটি ঠিক কতটা পুরনো।
যদিও প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারতীয় জাদুঘরে এই ধরনের মূর্তি রয়েছে। এই মূর্তিগুলিকে সারনাথ মূর্তি বলা হয়। প্রথম ধরনের মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। তবে এত বছরের পুরনো মূর্তি পুরুলিয়ার জৈনভূমি থেকে পাওয়া নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশের কাছে খবর পেয়ে জেলার তথ্য সংস্কৃতি দফতরের আধিকারিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে এই মূর্তি উদ্ধার করেন। তবে এই মূর্তিকে বুদ্ধদেবের মূর্তি বলতে নারাজ জৈন সংস্কৃতি সংরক্ষক উপাধি পাওয়া সুভাষ রায়। তিনি বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণভাবে জৈন প্রত্ন মূর্তি বা তীর্থঙ্কর মূর্তির মস্তকের অংশ।’ তিনি দাবি করেছেন ওই এলাকায় ১০ থেকে ১২টি স্থল জৈন প্রত্নক্ষেত্র রয়েছে। উল্লেখ্য, ওই এলাকাকে যে জৈনক্ষেত্র ছিল সে বিষয়ে নিশ্চিত লোকসংস্কৃতির গবেষকরা। ইতিমধ্যেই এই এলাকাকে সংরক্ষণ করেছে রাজ্য পর্যটন বিভাগ। তাছাড়া হেরিটেজ ট্যুরিজম অ্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্রকে। জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘উদ্ধার হওয়া এই মূর্তির ওজন ২ কেজি। এটি কষ্টি পাথরের তৈরি। যে বুদ্ধমূর্তি পাওয়া গিয়েছে সেটি পঞ্চম শতকে তৈরি হয়েছিল। এই মূর্তি বুদ্ধদেবের মহাপরিনির্বাণ লাভের মূর্তি।’