হাত দিয়ে ধরা বা কোনও স্টিকের ব্যবহার নয়। শুধুমাত্র বুদ্ধিবলেই ধরা পড়ল স্পেকটেকেলড কোবরা। দারুণ কায়দায় সাপ উদ্ধারের এই ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলেন শিলিগুড়ির বনকর্মী অরিথ দে। সেই সঙ্গে দিলেন সচেতনতার বার্তা।
ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, এক বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েছে ওই সাপটি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বনকর্মীরা। দেখা যায়, সাপ ধরা দেখতে হাজির হয়েছেন স্থানীয়রা। রীতিমতো চেয়ার পেতে বসে গিয়েছেন তাঁরা। গোটা বিষয়টা দেথে বনকর্মীদের মজা করে 'সর্বনাশ' বলতে শোনা গেল ভিডিয়োয়।
কাপড়ের থলি। তার মুখে একটি পিভিসি পাইপ। সেটিকে দেওয়ালে ইঁট দিয়ে ঠেসে রাখলেন বনকর্মী। তারপর আলমারির পেছনে লুকিয়ে থাকা স্পেকট্যাকেলড কোবরাটিকে এক পাশ থেকে তাড়া দিলেন।
মজার বিষয় হল, তাড়া দিতে নিজে থেকেই বেরিয়ে এসে পিভিসি পাইপের ভিতরে দিয়ে থলিতে ঢুকে গেল সাপটি। তারপর ব্যাগটি বেঁধে নিলেন বনকর্মীরা।
দেখুন সেই ভিডিয়ো:
তবে হ্যাঁ। ভিডিয়োটা দেখে কাজটা সহজ মনে হলেও তা মোটেও নয়। বহু সাপ ধরার অভিজ্ঞতা থেকেই এই তালিম পেয়েছেন বনকর্মী। সাপ ধরা কোনও বাহাদুরির কাজ নয়। বরং সব সময়েই সাবধানতায় নজর দেওয়া প্রয়োজন। এমনটাই বললেন বনকর্মী অরিথ দে। অরিথ উত্তরবঙ্গের অন্যতম পরিচিত একজন বনকর্মী। প্রায় আট বছর ধর ধরে এই কাজ করছেন। এর আগেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাঁর বিরল সাপ উদ্ধারের ভিডিয়ো প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন : ইউটিউব দেখে সাপ ধরতে গিয়ে বিপত্তি, হাসপাতালে ভর্তি যুবক
সাপ উদ্ধার করার নেশা থেকেই এই পেশায় আসা তাঁর, জানালেন বনকর্মী। এর পাশাপাশি লোকালয়ে হাতি প্রবেশ, জঙ্গল সংরক্ষণের মতো বন দফতরের বিভিন্ন কাজের নিযুক্ত তিনি। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে অরিথ জানালেন, সাপ উদ্ধারের পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধির কাজও করেন তিনি। সাপ উদ্ধারের পরেই তাঁর সঙ্গে থাকা কিছু ছবি দেখান স্থানীয়দের।
অরিথ বললেন, 'অ-এ অজগর আসছে তেড়ে... ছোটো থেকে আমাদের মধ্যে সাপ নিয়ে ভুল ধারণা ও ভীতি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু আসলে আমাদেরই কিছু ভুলে সাপ বাড়ি-ঘরে প্রবেশ করে। বাড়িঘর ও চারপাশ সাফ-সুতরো না রাখলে সাপ তো আসবেই।'
আরও একটি বিষয়ে জানালেন অরিথ। তিনি বললেন, সাপ ধরার পর তা ১০০-২০০ মিটারের মধ্যেই ছেড়ে দেওয়া নিয়ম। তাঁর কথায়, 'কোনও সাপ তো আর আকাশ থেকে পড়ে না। সেটা বছরের পর বছর কাছেপিঠেই বড় হয়েছে। এবার একবার সে ভুল করে আপনার বাড়িতে ঢুকে পড়েছে।'
অরিথ জানালেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ১০০-২০০ মিটারের মধ্যে কোনও যোগ্য স্থানে সাপগুলি ছেড়ে দেন তাঁরা। কখনই দ্বিতীয়বার সমস্যার সম্মুখীন হননি। এমনই এক ভিডিয়োয় দেখা গেল, দাঁড়াশ সাপ উদ্ধার করে বাড়ির পাশের জলাজমিতে ছেড়ে দিলেন তিনি। কেউ কেউ আপত্তি করলেও তাঁদের বুঝিয়ে বললেন তিনি।
সাপ স্থানান্তর করলে সেই স্থানের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। ইঁদুর-ব্যাং বেড়ে গিয়ে পরবর্তী সময়ে আবারও নতুন এমনকী আরও বেশি সাপ আসতে পারে।
বাড়িতে সাপ ঢুকেছে, কোথায় খবর দেব?
অরিথ জানালেন, সকলের কাছে সাপ উদ্ধারকারী বা বন দফতরের নম্বর নাও থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় থানায় ফোন করলেই যথেষ্ট। তাঁরাই স্থানীয় বনকর্মীদের এ বিষয়ে জানিয়ে দেবেন। তাই কেউ সাপ মারার চেষ্টা করলে অবশ্যই তাঁকে বারণ করুন। স্থানীয় পুলিশকর্মীদের সাহায্য নিন। বাগানে বা ঝোপঝাড়ে সাপ দেখলে সেই স্থান ফাঁকা করে তাকে বের হয়ে যেতে দিন। অযথা বিরক্ত বা বাহাদুরি করে ধরতে যাবেন না।
সাপের কামড়ের ক্ষেত্রে ১০০ মিনিটের মধ্যে নিকটতম স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতালে নিয়ে যান। কামড় খাওয়া ব্যক্তিকে শান্ত রাখুন। বাঁধনের প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন: সাপে কাটার পর চিকিৎসা না করিয়ে ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস, মৃত্যু নাবালিকার