কোচবিহারে সভা থেকেই বিএসএফ এবং সিএএ নিয়ে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা বিএসএফ ওই এলাকার মানুষের মধ্যে বিশেষ ধরনের আইডেন্টিটি কার্ড বিলি করছে বলে আজ, সোমবার সরকারি সভা থেকে অভিযোগ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ সফরে কোচবিহারে পৌঁছেই জনসংযোগ করতে দেখা যায় তৃণমূল সুপ্রিমোকে। বিরোধীদের কটাক্ষের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের একের পর এক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিকে কোচবিহার জেলার পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে সার্কিট হাউস থেকে পায়ে হেঁটে জনসংযোগ সারেন। তারপর কোচবিহার রাসমেলা ময়দানে এসে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। রাসমেলা মাঠে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কোচবিহারের নারায়ণী ব্যাটালিয়ন। এখানেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন করে দিয়েছি। তার হেডকোয়ার্টার হচ্ছে মেখলিগঞ্জে। বিএসএফের অত্যাচারে মানুষ অত্যচারিত। ওরা সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনকে আলাদা পরিচয়পত্র দিতে চাইছে। ওই পরিচয়পত্র নিলে এনআরসি’তে পড়ে যাবেন। বলবেন আপনার আধার, রেশন কার্ড আছে। বিপদে পড়লে আমি আছি। আমি বাঘের বাচ্চার মতো আছি।’ এদিন রাজবংশী স্কুলগুলিকে সরকারি স্বীকৃতি দেন মুখ্যমন্ত্রী।
অন্যদিকে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে উত্তরবঙ্গে হওয়া উন্নয়নের তালিকা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একের পর এক নদীর উপর সেতু নির্মাণ থেকে রাস্তা সম্প্রসারণ, মন্দির সংস্কার থেকে বিমানবন্দর তৈরির তালিকা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘আমি ভাঙি না গড়ি। তাই বলব, কারও প্ররোচনায় পা দেবেন না।’ একই সঙ্গে কোচবিহারের মানুষকে সতর্ক করে তাঁর পরামর্শ, ‘বিএসএফ আইডেন্টিটি কার্ড দিতে এলে নেবেন না। ওই কার্ড নিলে আপনি এনআরসি’র কোপে পড়ে যেতে পারেন। নতুন করে ক্যা ক্যা করে চিৎকার করছে। ভোটের ফ্যা ফ্যা রাজনীতি করার জন্য। কীসের সিএএ? নাগরিক না হলে এতদিন কি ভোট দিতে পারতেন?’
আরও পড়ুন: ‘আমি আজ একটা বড় কাজ করলাম’, ২১০টি রাজবংশী স্কুলকে সরকারি স্বীকৃতি মুখ্যমন্ত্রীর
এছাড়া এদিন ১৯৮টি প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মোট বরাদ্দের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের পর থেকে কোচবিহারে কর বাড়ানো হয়নি। সম্প্রতি পুরসভার পক্ষ থেকে বাসিন্দাদের বাড়িতে নোটিশ পাঠানো হচ্ছে। বিষয়টি জানতে পেরে সভাস্থলে দাঁড়িয়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘অনেকে এই নিয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন। পুরসভাকে বলব, নোটিশ পাঠানোর কাজ বন্ধ রাখুন।’ কেন্দ্রীয় বাহিনী বা এজেন্সিকে গ্রামে পাঠিয়ে মানুষকে ভীত, সন্ত্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘কোচবিহারের সীমান্ত এলাকার গ্রামে বিএসএফ অত্যাচার শুরু করেছে বলে খবর পাচ্ছি। আমি আপনাদের বলে যাচ্ছি, গ্রামে ঢুকে অত্যাচার করলে থানায় গিয়ে এফআইআর করবেন। মনে আছে শীতলকুচির ঘটনা? চারটে ছেলেকে বিএসএফ গুলি করে মেরে দিয়েছিল। আপনারা বিপদে পড়লে আমি আছি, বাঘের বাচ্চার মতো আছি। আপনাদের রক্ষা করবই।’