নয়াদিল্লিতে যাওয়ার প্রাকমুহুর্তে শিবঠাকুর মণ্ডলের এফআইআর শাপে বরই হল অনুব্রত মণ্ডলের। এখন ইডি আর তিহার জেলে নিয়ে যেতে পারছে না। বিরোধীরা যে অস্ত্রকে হাতিয়ার করবে ভেবেছিল তাও গেল ভোঁতা হয়ে। উলটে এই এফআইআর করার জেরে দলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান শিবঠাকুর মণ্ডলকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল কংগ্রেস। অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে তিনি গলা টিপে হত্যার চেষ্টার মামলা দায়ের করেছেন দুবরাজপুর থানায়। কারণ শিবঠাকুর নাকি চেয়েছিলেন বিজেপিতে যোগ দিতে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, কে এই শিবঠাকুর মণ্ডল? ২০১৩ সালে দুবরাজপুরের বালিজুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন এই শিবঠাকুর মণ্ডল। যার সঙ্গে একদা অনুব্রত মণ্ডলের হলায়–গলায় সম্পর্ক ছিল। সেটাই নাকি পরে তেতো হয়ে যায়। অত্যন্ত সাধারণ পরিবারের ছেলে তিনি। পঞ্চায়েত প্রধান হওয়ার পর তিনি ভালই পঞ্চায়েত চালাচ্ছিলেন। হঠাৎই তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে তৃণমূল কংগ্রেসেরই জনপ্রতিনিধিরা। অনুব্রত মণ্ডলই নাকি তখন পঞ্চায়েত থেকে সরে যেতে বলেছিলেন শিবঠাকুরকে। কেষ্ট দার নির্দেশ মেনে প্রধান পদ থেকে সরে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তা মেনে নিতে পারেননি। প্রধান হিসাবেই তিনি তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করেন। তারপরই আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যায়। তখন তিনি পাঁচটা টিকিট দলের কাছে চেয়েছিলেন। পঞ্চায়েতের অনাস্থা রুখতেই তিনি এটা করেছিলেন। তাঁকে দল দুটো টিকিট দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তিনি নেননি।
আর কী জানা যাচ্ছে? অনুব্রত মণ্ডলের বাড়ি নিচুপট্টিতেও একাধিকবার গিয়েছিলেন এই শিবঠাকুর। তাছাড়া দুবরাজপুর পার্টি অফিসে একাধিকবার দু’জনে বৈঠকও করেছিলেন। সুতরাং সম্পর্ক আগে থেকেই ভাল ছিল অনুব্রত–শিবঠাকুরের মধ্যে। একাধিক নির্বাচনে অনুব্রতর নির্দেশ মেনেই কাজ করেছেন শিবঠাকুর। অনুব্রত জেলে যাওয়ার আগেও টেলিফোনে শিবঠাকুরের সঙ্গে কথা হয়েছিল বলে সূত্রের খবর। আজ, মঙ্গলবার অবশ্য শিবঠাকুর বলেন, ‘ভগবানকে তখন সবটা বলতাম। হনুমানজিকে জানাতাম। ঠাকুরের আর্শীবাদে আমি আবার পঞ্চায়েতের প্রধান হিসাবেই ফিরে আসি।’ গরু পাচারের বিষয়ে কিনি কিছু জানতেন না বললেও সেটা সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়নি।
ঠিক কী অভিযোগ শিবঠাকুরের? এদিন শিবঠাকুরের অভিযোগ, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন চলাকালীন তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন অনুব্রত মণ্ডল। এমনকী তাঁকে খুনেরও চেষ্টা চালান দোর্দণ্ডপ্রতাপ এই তৃণমূল কংগ্রেস নেতা। অনাস্থার অভিযোগ তুলে বলপূর্বক তাঁকে পঞ্চায়েত প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেন অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু ছ’মাসের মধ্যে ফের পঞ্চায়েত প্রধান হন শিবঠাকুর। সেটা কেমন করে সম্ভব হল? তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। অথচ তারপর অনুব্রত মণ্ডল কিছু বলেননি শিবঠাকুরকে বলেই সূত্রের খবর। এতদিন পর কেন পুরনো বিবাদ উসকে দিলেন? জবাবে শিবঠাকুর বলেন, ‘আমি ঠাকুরভক্ত মানুষ। ঠাকুরকে ডাকতাম যে যাতে সব প্রকাশ্যে বলতে পারি। এখন তো উনি জেলে। এই সুযোগে আমি সাহস সঞ্চয় করে দুবরাজপুর থানায় এসে অভিযোগ জানালাম। আমি চাই, ওঁর কঠিন শাস্তি হোক।’