স্বামীকে হারিয়েছেন বেশ কয়েক বছর। ২ সন্তানকে নিয়ে অভাবের সংসার বছর তিরিশের আদিবাসী যুবতীর। বাড়ি বীরভূমের মহম্মদবাজারের চরিচা গ্রামপঞ্চায়েত এলাকায়। সম্প্রতি এলাকারই এক যুবকের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার ওপর ওই যুবক ভিনজাতের। আর সেটাই ‘ভাল’ চোখে দেখেননি গ্রামের মোড়ল–সহ মাতব্বররা। এই ‘অপরাধ’–এর শাস্তি হিসেবে ওই আদিবাসী যুবতীকে গণধর্ষণ এবং সালিশি সভা বসিয়ে জরিমানা চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে অভিযুক্ত গ্রামের মোড়ল–সহ ৩ জনকে।
মহম্মদবাজার থানায় দায়ের করা অভিযোগে ওই নির্যাতিতা জানিয়েছেন, ঘটনাটি ১৮ অগস্ট, মঙ্গলবারের। ওদিন সন্ধ্যায় গ্রামের এক পুজোর অনুষ্ঠান থেকে ওই যুবকের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। শেওড়াকুড়ি মোড়ের সামনে গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা তাঁদের পথ আটকায়। অভিযোগ, তাঁদের স্থানীয় ক্লাবে আটকে মারধর করে তারা। গভীর রাতে পাশের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ওই যুবতীকে ধর্ষণ করে ক্লাবের সদস্য ৫ যুবক। ১৯ অগস্ট, বুধবার সকালে তাঁদের ছেড়ে দেয় অভিযুক্তরা।
তবে থানায় অভিযোগে এ ব্যাপারে উল্লেখ না থাকলেও গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, বুধবার সকালে গ্রামে সালিশি সভা বসে। সেখানে নির্যাতিতাকে ১০ হাজার ও তাঁর সঙ্গীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বৃহস্পতি ও শুক্রবার— এই দু’দিন আতঙ্কেই কেটে যায় তাঁদের। শনিবার এক আদিবাসী নেতার উদ্যোগে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা। ওদিন সন্ধ্যায় সিউড়ি জেলা হাসপাতালে নির্যাতিতার ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। জানা গিয়েছে, তাতে গণধর্ষণের প্রমাণ মিলেছে।
জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং জানান, ৫ অভিযুক্তের মধ্যে তাম্বর মরান্ডি ও জলপা হাঁসদা নামে দু’জনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধরা পড়েছে গ্রামের মোড়লও। এদিকে জানা গিয়েছে, আদালতে তোলা হলে ধৃত তাম্বর মরান্ডি ও জলপা হাঁসদাকে ৭ দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। নির্যাতিতার গোপন জবানবন্দিও নেওয়া হয়েছে।