নূপুর শর্মার বিতর্কের মধ্যেই এবার বিতর্ক শুরু হয়েছে মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে। সম্প্রতি কানাডাবাসী ভারতীয় লীনা মণিমেকালাইয়ের ‘কালী’ তথ্যচিত্রের পোস্টার নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল। এবার সেই বিতর্কে যুক্ত হয়েছে মহুয়া মৈত্রের নাম। সম্প্রতি এক ইংরেজি সংবাদমাধ্যমকে এ বিষয়ে নিজের মতামত জানিয়েছেন মহুয়া। আর তা নিয়েই বিতর্কের সূত্রপাত। মহুয়ার এই মন্তব্যের জেরে দু’ভাগ হয়ে গিয়েছেন বাঙালি বুদ্ধিজীবীরাও। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাঁরা জানিয়েছেন নিজেদের মতামত।
ঠিক কী কী হয়েছে? দেখে নেওয়া যাক। (আরও পড়ুন: মহুয়ার বিরুদ্ধে থানায়-থানায় অভিযোগ BJP-র, পালটা চ্যালেঞ্জ TMC সাংসদের)
কী বলেছেন মহুয়া মৈত্র: ঈশ্বরকে এক এক জনের এক এক রকমের মত। ভুটান বা সিকিমে ঈশ্বরকে সকালের পুজোয় হুইস্কি দেওয়া হয়। উত্তরপ্রদেশে তা শুনলে সকলে আঁতকে উঠবেন। আমার কাছে কালী এমন দেবী, যিনি মাংস খান, মদ্যপান করেন। তারাপীঠে সাধুরা ধূমপান করেন। আবার কালীর ওই রূপকেই অনেকে পুজো করেন। নিজের মতো করে কালীকে কল্পনা করার স্বাধীনতা রয়েছে হিন্দুধর্মে। আমার এই স্বাধীনতায় কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারেন না। ঠিক যেমন কেউ তাঁর ঈশ্বরকে নিরামিষভোজী কল্পনা করে আরাধনা করতে পারেন, তাঁর স্বাধীনতাতেও হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। (আরও পড়ুন: 'মা কালী আমার কাছে মাংস খাওয়া, মদ গ্রহণকারী দেবী', বললেন তৃণমূলের মহুয়া)
মহুয়ার এই মন্তব্যের কারণে দুই ভাগ হয়ে গিয়েছে বুদ্ধিজীবী মহল। দেখে নেওয়া যাক, সংবাদমাধ্যমে বলা বক্তব্যের থেকে কী বোঝা যাচ্ছে? কোন পক্ষে কে রয়েছেন:
মহুয়ার পক্ষে:
- পবিত্র সরকার (শিক্ষাবিদ): আমাদের লোককথায় দেবীকে নিয়ে ঠাট্টা করার রেওয়াজ আছেই। এটির ইতিহাসই আছে। দেবীর প্রসাদে সুরা, মাংস দেওয়ার রীতিও আছে। শিবকে নিয়ে ঠাট্টা করেছেন খোদ ভারতচন্দ্র। এগুলি মানুষ সহ্য করে এসেছেন। এ নিয়ে এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই।
- অনিকেত চট্টোপাধ্যায় (পরিচালক): মহুয়া মৈত্র যা বলেছেন, তা সমর্থন না করার কারণ দেখছি না।
- সুবোধ সরকার (কবি, সাহিত্যিক, অধ্যাপক): দেবদেবীদের নিয়ে অনেক রকমের ব্যঞ্জনা আছে। এখন কেউ যদি কিছু বলেন সেটাকে নিয়ে রাজনীতি করা হয়। পাঁচ-দশ বছর আগেও এমন হত না।
মহুয়ার বিপক্ষে:
- নবকুমার ভট্টাচার্য (পশ্চিমবঙ্গ বৈদিক অ্যাকাডেমির সচিব): কালী পুজোয় দেবীকে মদ নিবেদন করা হয় না। মদ দিয়ে দেবীর তর্পণ হয়। কালীপুজোর ক্ষেত্রে অনেকেই নানা ভুল করে থাকেন। মদ দেওয়াটাও তেমনই ভুল। দিতে হয় কারণবারি।
- নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি (ঐতিহাসিক, পুরাণবিদ): দেবী কালী সম্পর্কে উনি যা বলেছেন, সেটি ঠিক নয়। কালী পুজোয় মদ থাকতে পারে। কিন্তু সেটি তন্ত্র সাধনার অঙ্গ হিসাবে থাকে। তা বলে বলা যাবে না দেবী সুরাপ্রেমী। তান্ত্রিকতায় এগুলো হয়। সার্বিকভাবে হয় না। দক্ষিণেশ্বরে এটা হয় না। যেমন সাজঘরে কোনও বহুরূপী বিড়ি খেতেই পারেন। কিন্তু তাই বলে কালী সিগারেট খাচ্ছেন, এমন ছবি দিয়ে পোস্টার করা যায় না। তেমনই দেবীকে মদ্যপ বলাও যায় না।
এ সবের মধ্যে অবশ্য মহুয়াকে দমিয়ে রাখা যায়নি। এই বিতর্কের মধ্যেই নিজেকে কালীভক্ত বলে দাবি করেছেন তিনি। বলেছন, নিয়মিত কালীপুজোও করেন। আর নিজের হোয়াটসঅ্যাপের ডিপিও করে ফেলেছেন কালীর ছবি।