যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে শোরগোল গোটা রাজ্য। কিন্তু তারপরেও থামছে না র্যাগিং বির্তক। বরং রাজ্যের নামকরা কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে বেরিয়ে আসছে র্যাগিংয়ের ঘটনা। এবার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য প্রাক্তন এক পড়ুয়া ছাত্র থাকাকালীন ভয়াবহ র্যাগিংয়ের মুখোমুখি হওয়ার অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার হলেন। এমনকী যে পুলিশ যাদবপুর কাণ্ডে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে, সেই পুলিশকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি তখন বলে অভিযোগ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি বিভাগের (বি–টেক) ওই পড়ুয়া এখনও থাকেন বালিগঞ্জের হস্টেলে। ২০১৯ সালে ভর্তি হওয়ার পরই তিনি র্যাগিংয়ের শিকার হন বলে অভিযোগ। তখন ‘ইন্ট্রো’র নামে সিনিয়ররা তাঁকে দিয়ে মদ আনাতেন, মদের গ্লাস ধোয়াতেন এবং তাঁকে মদ খাওয়ার জন্যও চাপ দেওয়া হতো বলে অভিযোগ।
এদিকে এই ঘটনার কথা একমাস আগেও তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন বলে তাঁর অভিযোগ। এখানেই দিনের পর দিন শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল তাঁকে। ওই ছাত্রের অভিযোগ, এই হস্টেলেও যাদবপুরের মতোই ‘ইন্ট্রো’ পর্ব চলত। ঘরে বসেই মদ খেত সিনিয়ররা। তাঁকেও মদ খাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হতো। আবার মদ এনে দিয়ে পরে গ্লাস ধুতে বাধ্য করা হতো বলে অভিযোগ। করোনাভাইরাস যখন চলছে তখন দু’বছর ওই ছাত্র বাড়িতে ছিলেন। তারপর ফিরে আসার পরেও একইভাবে অত্যাচারের শিকার হয়েছেন বলে তাঁর দাবি।
কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছে তাঁর? রাতে তাঁর দরজায় তালা দিয়ে দেওয়া হতো। সিনিয়ররা এসে ঘরে প্রস্রাব করে দিত বলে তাঁর অভিযোগ। তারপরও থামেনি অত্যাচার। তাঁর ঘরে বোমা ছোড়া হয়েছিল বলেও দাবি ওই ছাত্রের। তাঁর মেসের খাবারও বন্ধ করে দেওয়া হলে তিন মাস নিজেকে রান্না করে খেতে হয়েছিল। এবার বিষয়টি নিয়ে এসএফআই উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছে। এখন এসএফআই দোষ দিচ্ছে টিএমসিপি’র ঘাড়ে। আর টিএমসিপি দোষারোপ করছে এসএফআই–কে। কিন্তু ওই ছাত্রের বয়ান অনুযায়ী এখন কেঁপে গিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ ছাত্রটি এবার রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে ঘটনার বিবরণ লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: পুরুলিয়ার আদ্রা স্টেশনে হইহই কাণ্ড, প্ল্যাটফর্ম আর স্টেশনের মাঝখানে আটকে ব্যক্তি
ঠিক কে, কী বলছেন? এসএফআইয়ের অভিযোগ, টিএমসিপি নেতা অভিরূপ চক্রবর্তীর নেতৃত্বেই এই ঘটনা ঘটেছে। এসএফআইয়ের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আঞ্চলিক কমিটির সম্পাদক সম্পৃক্তা বসুর অভিযোগ, ‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হস্টেলে আগে টিএমসিপি এমন কাণ্ড করেছে। সমস্ত হস্টেলেই বহিরাগত এবং প্রাক্তন ছাত্ররা আছেন। তাঁদের বের করতে উদ্যোগী হতে হবে কর্তৃপক্ষকে।’ পাল্টা টিএমসিপি’র অন্যতম সাধারণ সম্পাদক অভিরূপ চক্রবর্তী বলেন, ‘ওই ছাত্র খাবারের টাকা দিতেন না। মেস কমিটি নিজেদের তহবিল থেকে টাকা দিয়ে খাবার আনাতে পারে না। এটা নিয়ে এসএফআই অপপ্রচার চালাচ্ছে।’ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাসের কথায়, ‘আমরা এই বিষয়ে জানতে পেরেই খাবারের ব্যবস্থা করি। তাছাড়া প্রাক্তন ছাত্ররা যাতে কেউ থাকতে না পারে সেটা নিশ্চিত করি আমরাই।’