হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন রোগীকে। আর চিকিৎসকের পরামর্শ মানতে গিয়ে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খেয়ে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে বসলেন এক রোগী। চিকিৎসকের এই ভুল চিকিৎসার দায়ে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিল ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। এই ক্ষতিপূরণে টাকা যৌথভাবে দিতে হবে ওই চিকিৎসক এবং তিনি যে হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন সেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে কেশপুরের বাসিন্দা আরেফুল মল্লিক ডান চোখে কর্নিয়ার সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের একটি বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে যান।তিনি ওই চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা করিয়েছিলেন। সেখানে অক্ষয় দাস নামে ওই চিকিৎসক তাঁর চোখের চিকিৎসা করেন। চোখে ড্রপ দেওয়ার পর ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু ওষুধ খাওয়ার পর তাঁর চোখের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। এমনকী তাঁর চোখ থেকে রক্ত বের হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। পরে চিকিৎসক ওষুধ বদলে দিলে আরও বিপত্তি ঘটে। চোখ থেকে রস পড়তে থাকে এবং ক্রমে তাঁর দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়। ফের চিকিৎসকের দ্বারস্থ হন তিনি। কিন্তু, তারপরেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। ওই চিকিৎসক আরেফুলকে কলকাতার একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে দেখিয়েও লাভ হয়নি। তিনি ডান চোখের দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে ফেলেন। ঘটনায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে তিনি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হন আরেফুল। তিনি ৩০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন। প্রায় ৬ বছর মামলা চলার পর অবশেষে জয়ী হন আরেফুল।
মামলার বয়ান অনুযায়ী, ওই চিকিৎসক একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক ছিলেন। তিনি রোগীকে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আর ভুল চিকিৎসার কারণে দৃষ্টিশক্তি হারান ওই রোগী। আদালত জানিয়েছে, এমবিবিএস পাস না করে রোগীকে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ দেওয়াটা অপরাধ, তেমনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসককে দিয়ে কাজ করানোটাও বেসরকারি হাসপাতালের অপরাধ। এর ভিত্তিতে আদালত ওই চিকিৎসক এবং চক্ষু চিকিৎসা কেন্দ্রের সমালোচনা করে। আদালত জানায় চিকিৎসা অনুযায়ী আইন অনুযায়ী একজন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হয়ে অ্যালোপ্যাথিক ওষুদ দিলে চিকিৎসকের জেল এবং জরিমানা হওয়ার কথা। এ ক্ষেত্রে যুগ্মভাবে ২০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে আলাদত। যদিও ওই চিকিৎসকের আইনজীবী জানান, চিকিৎসকের বিন্দুমাত্র ভুল ছিল না। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁরা জাতীয় ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে যাবেন।